জয় ভূতনাথ হে দেব প্রলয়ঙ্কর (joy vutnath he deb proloyonkor)

জয় ভূতনাথ হে দেব প্রলয়ঙ্কর;
ভৈরব শ্মশানচারী শিব প্রমথনাথ শঙ্কর।
       ভয়াল করাল দানব
      এসো পরিহার মানব
ধূর্জটি রুদ্র মহেশ, জয় জয় শিব শঙ্কর॥

  • ভাবার্থ: ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের প্ল্যানচেট নামক নাটক-এর রেকর্ডের জন্য এই গানটি রচিত হয়েছিল। প্লানচেটের মাধ্যমে শিবাত্মাকে উপস্থিত করার জন্য, এই গানকে ব্যবহার করা হয়েছে- শিবস্তুতিমূলক শিবাত্মার আবাহনকারী মন্ত্র হিসেবে। এই মন্ত্রের প্রথমাংশ রয়েছে শিবের নানা মহিমময় রূপের কথা। শেষাংশ রয়েছে- অশুভশক্তি বিনাসক শিবের কথা।

    মন্ত্রের সূচনা হিসেবে স্থায়ীতে শিবকে নানা নামে সম্বোধিত করে- জয়ধ্বনি দেওয়া হয়েছে।  গানটির স্থায়ীতে শিবের যে সকল নাম পাওয়া যায়, তা হলো- ভুতনাথ (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম নামক ভূতের অধিপতি), প্রলয়ঙ্কর (ধ্বংসের অধিকর্তা), ভৈরব (শিবের রুদ্ররূপ), শ্মশানচারী (শ্মশানে বিচরণকারী দেবতা), শিব (শুভশক্তির অধিকর্তা), প্রমথনাথ (প্রমথ নামক শিবের অনুচরদের অধিকর্তা), শঙ্কর (প্রশান্তি ও কল্যাণের দেবতা)। পরপর শিবের এতগুলো নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে শিব প্ল্যানচেটের মাধ্যমে ধরা দেন।

    গানটির শেষাংশ জগতের কল্যাণ কামনায় অশুভ শক্তিনাশক শিবকে কবি আহবান করেছেন কবি। ভয়ঙ্কর, ভয়াল দানবীয় শক্তি এবং পারহার (অপরাধজনিত কারণে পরিত্যাগ করা হয়েছে অর্থে) মানব। এসকল অশুভ শক্তিকে পরাভূত করার জন্য শিবের অমোঘ শক্তিকে নির্দেশিত করা হয়েছে গানের এই অংশে। ধূর্জটি [ধূর (ত্রিলোকের) জটা (জটা পাকানো জটিল সংঘাত) যাহার] রূপে এবং কল্যাণময় ধ্বংসের নিমিত্তে  শিব হয়ে ওঠেন রুদ্র (ভয়ঙ্কর ক্রোধান্বিত রূপ)। কবি শিবের এই রুদ্ররূপে ভীত নন। তাই শান্তি ও কল্যাণের জন্য,  প্লানচেটের আসর বসিয়েছেন নির্দ্ধিতায়, নির্ভয়ে। অশুভ শক্তিনাশক শিবকে তুষ্ট করার জন্য নিবেদিত এই মন্ত্র-সঙ্গীত হয়ে উঠেছে শান্তি ও কল্যাণময় শুভ শক্তির আবাহনী সঙ্গীত। আর নাটকের প্ল্যানচেট হলো- শুভাশুভ শক্তির রণক্ষেত্রে প্রবেশের সুমঙ্গল-দ্বার।
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৩) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি নজরুল ইসলামের রচিত প্ল্যানচেট নাটকটির রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই নাটকে গানটি ছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ২ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৮৮৮। পৃষ্ঠা: ৫৬৯]
  • রেকর্ড:
    • ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি  (মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৩৪৩) নজরুল ইসলামের সাথে রেকর্ড কোম্পানির চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে এই গানটির উল্লেখ ছিল।
    • এইচএমভি। রেকর্ড নাটক: প্ল্যানচেট  [আগষ্ট ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৩)। রেকর্ড নম্বর: এন ৯৭৬০। শিল্পী: ধীরেন দাস] [শ্রবণ নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি (আবাহন)

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।