জয় হোক জয় হোক (joy hok, joy hok)
তাল: কাহার্বা
জয় হোক জয় হোক —
শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক্,
সত্যের জয় হোক, জয় হোক॥
সর্ব অকল্যাণ পীড়ন অশান্তি
সর্ব অপৌরুষ মিথ্যা ও ভ্রান্তি,
হোক ক্ষয়, ক্ষয় হোক জয় হোক জয় হোক॥
দূর হোক অভাব ব্যাধি শোক
দুখ দৈন্য গ্লানি বিদ্বেষ অহেতুক,
মৃত্যুবিজয়ী হোক অমৃত লভুক —
ভয়-ভীত দুর্বল নির্ভয় হোক।
রবে না এ শৃঙ্খল উচ্ছৃঙ্খলতার
বন্ধন কারাগার হবে হবে চুরমার,
পার হবে বাধার গিরি মরু পারাবার —
নির্যাতিত ধরা মধুর, সুন্দর প্রেমময় হোক,
জয় হোক জয় হোক॥
- পাঠভেদ: দৈনিক নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশিত 'জয় হোক! জয় হোক!' কবিতার অংশবিশেষে নিতাই ঘটক সুরারোপ করে গানে পরিণত করেছিলেন। ফলে কবিতা ও গানের ভিতরে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এই কবিতাটির প্রথম ১৭ পংক্তিতে সুরারোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম পঙ্ক্তি জয় হোক, জয় হোক, আল্লার জয় হোক; অংশ বাদ রেখে পরতের পঙ্ক্তি থেকে নিতাই ঘটক সুর করেছিলেন। এছাড়া মূল কবিতার 'অসৎ, অবিদ্যা, লোভী ও ভোগী লয় হোক' পংক্তির পরিবর্তে গানে ব্যবহার করা হয়েছে 'নির্যাতিত ধরা মধুর, সুন্দর প্রেমময় হোক'।
- ভাবসন্ধান
দৈনিক 'নবযুগ' পত্রিকায় কবিতাকারে 'জয় হোক! জয় হোক!' শিরোনামে প্রকাশের সময় 'আল্লার জয় হোক!' ছিল। এই কবিতার ষষ্ঠ স্তবকে সাম্যের কথা বলেছেন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীতে। এই কবিতাকে নিতাই ঘটক যখন সুরারোপ করেছেন, তখন তা সাম্যবাদী দর্শনে পরিণত হয়েছে। সকল অকল্যাণ, পীড়ন, অপুরষোচিত মিথ্যা, সব বিলীন হয়ে কল্যাণকর জগতের প্রতিষ্ঠা এই গানের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবির আকাঙ্ক্ষা কোনো ধর্মীয় আদর্শে প্রতিষ্ঠিত নয়, মানব ধর্মের আদর্শেই তা প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই কবির কামনা। তিনি অভাব, ব্যধি, শোক, দুঃখ, গ্লানির অবসান চান। পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত অশান্তির মৃত্যদশা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ অমৃতপুত্র হয়ে উঠুক। কবি কামনা করেন সকল অন্যায়ের কারাগার ভেঙে যাক, সকল নির্যাতনের অবসান হোক। অসুন্দর বাধা অপসারিত হয়ে জীবন মধুর ও প্রেমময় হয়ে উঠুক।
- রচনাকাল ও স্থান:গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ (সোমবার ১২ ফাল্গুন ১৩৪৭) তারিখে, দৈনিক নবযুগ পত্রিকায় কবিতা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে এই কবিতাটির প্রথম ১৭ পংক্তিতে সুরারোপ করা হয়েছে। সুরারোপের কাজটি করেছিলেন নিতাই ঘটক। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ৮ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, ২৩১৭ সংখ্যক গান। [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৭, ফেব্রুয়ারি ২০১১]। পৃষ্ঠা: ৬৯৯।
- অগ্রন্থিত কবিতা , গান ৮৭। [নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। নবম খণ্ড, বাংলা একাডেমী, ফেব্রুয়ারি ২০০৯]। পৃষ্ঠা: ১০৬-১০৮।
- পত্রিকা: দৈনিক নবযুগ [২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ (সোমবার ১২ ফাল্গুন ১৩৪৭)। শিরোনাম: জয় হোক! জয় হোক!]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নিতাই ঘটক। সঙ্গীতাঞ্জলি। দ্বিতীয় খণ্ড। দ্বিতীয় সংস্করণ। শ্যামাপূজা, ১৩৮৩। গান সংখ্যা ১০। পৃষ্ঠা: ৩৮-৩৯ [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: দেশাত্মবোধক-উদ্দীপক
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সা