এ আঁখি জল মোছ প্রিয়া ভোলো ভোলো আমারে। (e akhi jol mochho priya bholo bholo amare)
এ আঁখি জল মোছ প্রিয়া ভোলো ভোলো আমারে।
মনে কে গো রাখে তারে (ওগো) ঝরে যে ফুল আঁধারে॥
ফোটা ফুলে ভরি' ডালা গাঁথ বালা মালিকা,
দলিত এ ফুল লয়ে, (ওগো) দেবে গো বল কারে॥
স্বপনের স্মৃতি প্রিয় জাগরণে ভুলিও,
ভুলে যেয়ো দিবালোকে রাতের আলেয়ারে।
ঘুমায়েছ সুখে তুমি সে কেঁদেছে জাগিয়া,
তুমি জাগিলে গো যবে সে ঘুমায়ে ওপারে॥
- ভাবার্থ: গানটির ভিতরে অভিমানী প্রেমিকের গভীর বিরহের বাণী ফুটে উঠেছে করুণ রসে। পরম অভিমানে সকরুণ সুরে প্রেমিক তাঁর প্রেমিকা বলছে, চোখের জল মুছে ফেলো এবং আমাকে ভুলে যাও। রাতের অন্ধকারে ফোটা ফুল, রাতের অন্ধকারেই যদি ঝরে পড়ে, তাকে কেউ কি মনে রাখে, এ জিজ্ঞাসা প্রিয়ার কাছে। সকলে অগোচরে তাদের প্রণয়ের ফুল ফুটেছিল, সকলের অগোচরে তা ব্যর্থ হয়ে ঝরে গেছে। তাকে মনে করে কষ্ট না পেয়ে ভুলে যাওয়ার মিনতি জানাচ্ছে প্রেমিক-বন্ধুকে।
অন্তরাতে প্রেমিক তাঁর প্রিয়ার কাছে সকতারে জানতে চাইছেন যে, প্রেম-কুসুম নিয়ে যে প্রেমহার তৈরি সে করছে, এ হার কাকে দেবে সে। কারণ, তাদের ব্যর্থ প্রেমের ফুলগুলো আজ বিবর্ণ, দলিত। এই বিধ্বস্ত ফুলের মালা তো উপহারের অযোগ্য হয়ে গেছে।
সঞ্চারীতে প্রেমিক তার প্রিয়াকে বলছে, স্বপনে বা কল্পনায় দেখা স্মৃতি আলেয়ার মতো। তা যেন সে ভুলে যায়। কারণ এই স্বপনের স্মৃতি মায়াময়, যার ঔজ্জ্বল্য আছে, কাছে টানার আকর্ষণ আছে। কিন্তু দিনের আলোতে তা মিলিয়ে যায়। এই স্বপ্নমায়াও তেমনি মিলিয়ে যায় জাগরণের বাস্তবের ছোঁয়ায়। প্রেমিক তাঁর প্রিয়াকে মনে করিয়ে দেয়, দুজনের জগৎ আলাদা হয়ে গেছে।
আভোগীতে কবি প্রেমিকাকে জানিয়ে সে যখন ঘুমের স্বপ্ন-জগতে সুখানন্দে বিভোর ছিল, তার প্রিয় তখন বিরহব্যথায় ব্যর্থ রাতি জেগে কাটিয়েছে। আর স্বপ্নের মধুর আবেশ ছেড়ে সে যখন জেগে উঠেছে, হয়তো তার প্রিয় তখন জাগরিত রাত্রি শেষে ঘুমিয়ে গেছে।
- রচনাকাল ও স্থান: কল্লোল পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ' (মে ১৯২৭) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল ইসলাম তাঁর ২৭ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষাংশে এই গানটি রচনা করেছিলেন।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-গীতিকা ।
- প্রথম সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ১৯৩০। ভাদ্র ১৩৩৭। ভৈরবী-কাহারবা। গজল। ২০। ভৈরবী- কাওয়ালী। পৃষ্ঠা: ৭৯।
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা। ৬৫। গজল।ভৈরবী- কাওয়ালী। পৃষ্ঠা: ২১৫
- নজরুল-গীতিকা ।
- রেকর্ডসূত্র: এইচএমভি। জুলাই ১৯৩১ (১৮ মাঘ -১৬ ফাল্গুন ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ)। রেকর্ড পি ১১৭২৪। শিল্পী: ইন্দুবালা [শ্রবণ নমুনা]
- পত্রিকা: কল্লোল জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৪ (মে ১৯২৭)। নজরুল-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
- পত্রিকা: কল্লোল পত্রিকা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৪ (মে ১৯২৭)। নজরুল-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
- স্বরলিপিকার:
- সুধীন দাশ। নজরুল সুরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম গান। নজরুল একাডেমী, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৮২। রেকর্ডে ইন্দুবালা 'র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- সেলিনা হোসেন। [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, একান্নতম খণ্ড, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪২৭। জুন ২০২১। রেকর্ডে ইন্দুবালা 'র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। গান সংখ্যা ৬। পৃষ্ঠা: ৩৪-৩৭। [নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়: