জাগো বনলক্ষ্মী! জোছনা বিগলিত চৈতালি নিশীথে (jago bonolokkhi! jochhona bigolito choitali nishithe)
জাগো বনলক্ষ্মী! জোছনা বিগলিত১ চৈতালি নিশীথে।
রাঙাও দশদিশি লজ্জা-অরুণ রূপ-সজ্জায় বনশ্রীতে॥
তব আলোছায়ার ডুরে শাড়ির আঁচল
লুটাক বকুল তলে সুখ-বিহ্বল,
তব লতা কবরী হের পুষ্প ভারে হ'ল ─
অবনমিতা অগ্নি অসম্বৃতে॥
পর গিরি-ঝর্ণার শতনরী হার হে বনলক্ষ্মী॥
বিহর-শীর্ণা দেহে (নব যৌবনের) জাগুক জোয়ার হে বনলক্ষ্মী!
ঝংকৃত হোক বনভূমি নিঝ্ঝুম
পুষ্পিত মাধবীর পর কঙ্কণ,
আলতা পর কলি পলাশ রঙ্গন ─ ভ্রমর-গুঞ্জন-নূপুর-গীতে॥
- ভাবার্থ: গানটি মধুবালা নামক মঞ্চ নাটকের জন্য রচিত হয়েছিল। এই গানের বনলক্ষ্মী মূলত বসন্তের বনশ্রী। কবি একে বনদেবীর আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন এই গানে। এই গানের প্রেক্ষপটা হিসেব বলা হয়েছে- 'বর্ষপরে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বিরহিণী বনলক্ষ্মী আজ অপরূপ মাধুরীতে শ্রীতে রূপসজ্জা করিয়াছে।' এই নাটকের বন-বালিকারা এই বিরহিণী বনলক্ষ্মীকে চৈতালি পূর্ণিমার মোহনীয় রাতে- দশদিক রঞ্জিত করে লজ্জারুণ রূপসজ্জায় জেগে ওঠার জন্য জাগরণীর গান গাইছে।
বন-বালিকারা এই গানে বিনীত অনুরোধে তাকে বলছে- বসন্তের আলোছায়ার বর্ণাঢ্য ডুরে শাড়ির আঁচল, সুখবিহ্বলতায় লুটিয়ে পড়ুক বকুলতলে। তারা বলছে- দেখো তোমার লতায় বাঁধা কবরী পুষ্পভারে অবনমিতা হয়েছে- শিথিল অগ্নিশিখার মতো।
একই অনুরোধে বনলক্ষ্মীকে বলে- ঝর্নার শতধারার সৌন্দর্যে গাঁথা শতনরীর হার পরিধান করুক। বিহারিণী ঝর্নার শীর্ণা দেহ নবযৌবনের জোয়ারে জেগে উঠুক। তার চলার ধ্বনিতে নিস্তব্ধ বনভূমি ঝঙ্কৃত হোক। বন-বালিকারা এই বনলক্ষীকে সালঙ্করা রূপে দেখতে চায়। তাই তারা বনলক্ষ্মীকে মাধবী পুস্পের কঙ্কনে শোভিতা এবং পলাশ, রঙ্গনের কলির রঙের আলতায় রঞ্জিত পায়ে এবং ভ্রমর-গুঞ্জরিত সুর সুধার মাঝে দেখতে চেয়েছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের ২০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার ২ কার্তিক ১৩৪৬), ' মধুমালা' নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৪ মাস।
- মঞ্চনাটক: মধুমালা (নাটক)। নাট্যভারতী রঙ্গমঞ্চ [২০ অক্টোবর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৩ কার্তিক ১৩৪৬)। প্রথম অঙ্ক। বন-বালিকাদের গান।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১৪১৪]
- নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ সপ্তম খণ্ড (কার্তিক ১৪১৯/নভেম্বর ২০১২)। প্রথম অঙ্ক। বন-বালিকাদের গান। পৃষ্ঠা: ২৭৪
- পর্যায়:
- প্রকৃতি: বনশ্রী