জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো (jago jogomaya jago mrinmoyi)

জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো,
তব কনিষ্ঠা কন্যা ধরণী কাঁদে আর ডাকে মা গো॥
            বরষ বরষ বৃথা কেঁদে যাই
            বৃথাই মা তোর আগমনী গাই
সেই কবে মা আসিলি ত্রেতায় আর আসিলি না গো॥
কোটী নয়নের নীল পদ্ম মা ছিড়িয়া দিলাম চরণে তোর,
জাগিলিনে তুই, এলিনে ধরায় মা কবে হয় হেন কঠোর।
            দশ ভুজে দশ প্রহরণ ধরি'
            আয় মা দশ দিক আলো করি',
দশ হাতে আন্ কল্যাণ ভরি' নিশীথ-শেষে ঊষা গো॥

  • ভাবার্থ: এটি একটি ভক্তি ও স্বদেশ পর্যায়ের গান। অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের কাছে কল্যাণময়ী যোগমায়ারূপী দুর্গার কাছে কবির প্রার্থনা, যেন- দেবী তাঁর মৃন্ময়ীসত্তা থেকে জেগে উঠুন এবং চিন্ময়ী তথা শক্তিরূপে চৈতন্যলোককে উজ্জীবিত করুন।

    ত্রেতা যুগে রাম, অত্যচারী রাবণকে হত্যার জন্য দুর্গার অকালবোধন ঘটিয়েছিলেন। কবির আক্ষেপ, তারপর দেবী আর দুর্গতিনাশিনী রূপে আবির্ভুতা হন নি। রাম দুর্গার অকালবোধনের জন্য ১০৮টি নীলপদ্ম সংগ্রহ করেছিলেন। দেবী রামের পরীক্ষার জন্য সেখান থেকে একটি পদ্ম অপহরণ করেছিলেন। পূজা সম্পন্ন করার জন্য রাম যখন নিজের চোখকে উৎপাটন করার উদ্যোগ নেন, তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে রামের পূজা গ্রহণ করেছিলেন। এখন কোটি কোটি মানুষ অত্যাচরের জর্জরিত হয়ে যেন তাদের নীল-নয়নপদ্ম উৎসর্গ করে চলেছে, তবু দেবী অত্যাচারী মানুষকে রক্ষার জন্য দুর্গতিনাশিনীরূপে আবির্ভুতা হন না। তাই দেবীর কাছে কবির আকুল আবেদন, দুর্গত মানুষকে রক্ষার জন্য, আবার দেবী দশহাতে দশ অস্ত্র ধারণ করে নেমে আসুক। অত্যাচরের কালো রাত্রির অবসানে- ঊষার শুভ্র আলোক কল্যাণের আলোকধারায় উদ্ভাসিত হোক। যেন দেবী তাঁর দশ হাতে কল্যাণের উপহার ছড়িয়ে দেন নবতর কল্যাণময় জগতের আনন্দলোকে।
     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর  (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৩ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল
      • প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪]। গীতি-শতদল-৮৪। যোগিয়া-একতালা
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। যোগিয়া-একতালা। গান সংখ্যা ৮৪। পৃষ্ঠা: ৩৩২।
    • সুরলিপিআগষ্ট ১৯৩৪ (শ্রাবণ ১৩৪১)। জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি গ্রন্থ। প্রকাশক: কাজী নজরুল ইসলাম
  • রেকর্ড: এইচএমভি। সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪০)।  এন ৭১৫৬। শিল্পী: কে মল্লিক। বৈতালিক। [শ্রবণ নমুনা] [কল্পনা আনাম (শ্রবণ নমুনা)]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ভক্তি ও স্বদেশ
    • সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
    • তাল: বৈতালিক [নজরুল স্বরলিপি। একবিংশ খণ্ড। আদি রেকর্ড। কে মল্লিক। ]
    • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।