এ নহে বিলাস বন্ধু ফুটেছি জলে কমল (e nohe bilash bondhu)

রাগ: মান্দ, তাল: কাহার্‌বা।
এ নহে বিলাস বন্ধু ফুটেছি জলে কমল
এ যে ব্যথা রাঙা হৃদয় আঁখি জলে টলমল॥
কমল মৃণাল দেহ ভরেছে কণ্টক ঘায়
শরণ লয়েছি গো তাই শীতল দীঘির জল॥
ডুবেছি আজ কালো জলে কত যে জ্বালা স'য়ে
শত ব্যথা ক্ষত লয়ে হইয়াছি শতদল॥
কবি রে কোন্ ক্ষত মুখে ফোটে যে তোর গীত সুর
সে ক্ষত দেখিল না কেউ দেখিল তোরে কেবল
সে গীতি দেখিল না কেউ শুনিল গীতি কেবল॥

  • ভাবসন্ধান: এটি বেদনাবিধুর অভিমানী কবির আত্মকথনমূলক গান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি, শতদলের মতো বিকশিত হয়েছেন, এটি সহজাত আনন্দে সরোবরে ফুটে উঠা পদ্মফুলের মতো নয়। নানা ঘাত প্রতিঘাতের ভিতর দিয়ে তাঁর এই প্রকাশ। তাঁর ব্যথাতুর হৃদয়বেদনা তাঁকে অশ্রুসজল করেছে। তিনি তাঁর চারপাশের গুণমুগ্ধ শ্রোতাদের 'বন্ধু' সম্বোধনে সেই অভিমানের কথাই এই গানে উপস্থাপন করেছেন।

    গানটির প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরাতে ফুটে উঠেছে, বেদনার সরোবরে বিকশিত পদ্মফুলের রূপকতায় তাঁর সৃজনশীল সত্তার উদ্ভাসনের কথা। কবি তাঁর পদ্মফুল হয়ে ফুটে ওঠার অবলম্বনকে মৃণাল দেহের (পদ্মফুলের ডাঁটা) সাথে তুলনা করেছেন। যে জীবনযাপনের ভিতর দিয়ে কবি বিকশিত হয়েছেন, তা আনন্দময় কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বহুবিধ আঘাতের দ্বারা তিনি জর্জরিত হয়েছেন। সে আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য তিনি শীতল দীঘির মতো প্রশান্তিময় জীবনকে বেছে নিয়েছেন। তারপরেও বেদনাদগ্ধ জীবনের শতযন্ত্রণার ক্ষত নিয়ে, কবি নিজেকে সৃষ্টির সৃজনশীল শত পাপড়িতে মেলে দিয়েছেন। তাই নিজেকে শতদল (পদ্মফুলের অপর নাম) নামে অভিহিত করেছেন।

    শেষ অন্তরাতে, অভিমানী কবির ভিন্নতর যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে। নানাবিধ যন্ত্রণার অভিঘাতে তিনি রচনা করেছেন নানা সুরের গান। কিন্তু সে বেদনাকে কেউ অনুভব করে নি। সে বেদনার সুরটুকু কেউ উপলব্ধিতে আনে নি। শুধু তাঁর গানটুকু শুনেই পরিতৃপ্ত হয়েছে।

    সুরের বিচারে গানটি গজল আঙ্গিকের। পারশ্যের মরমীকবিদের গভীর আত্মদর্শনের ভিতর দিয়ে স্রষ্টাকে চেনার গম্ভীর চলন এই গানে পাওয়া যায়। নজরুল সে ভঙ্গিটিই তুলে এনেছেন এই গানে, শুধু বিষয় আলাদা। এই গানে রয়েছে মৃদু কোমল দোলা, যা বেদনাকে তরঙ্গিত প্রবাহে সঞ্চালিত করে।
     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। চৈত্র মাসে প্রকাশিত হয়েছিল 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনের দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (মার্চ ১৯২৯) । এই সংস্করণে নতুন গান হিসেবে এই গানটি যুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • বুলবুল
      • দ্বিতীয় সংস্করণ চৈত্র ১৩৩৫ (মার্চ ১৯২৯)। নতুন সংযোজন ৭। মান্দ্-কাহারবা]
      • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ৪৯। মান্দ্-কাহারবা। পৃষ্ঠা: ১৮৭]
    • নজরুল গীতিকা
      • প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। গজল। ২৫। মান্দ্-কাহারবা। পৃষ্ঠা ৮৪]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা। ৭০। গজল । মান্দ্-কাহারবা।  পৃষ্ঠা: ২১৮]
    • আলেয়া প্রথম সংস্করণ [ডি,এম, লাইব্রেরী। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ। দ্বিতীয় অঙ্ক: চন্দ্রিকার গান]
       
  • রেকর্ড: টুইন। মার্চ ১৯৩২ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৩৮)। এফটি ৮৬৩। শিল্পী: মিস বীণাপাণি [শ্রবন নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, সপ্তম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫শে মে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ। ষষ্ঠ গান। পৃষ্ঠা: ৫২-৫৪]  [নমুনা]
  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।