ঝিলের জলে কে ভাসালো নীল শালুকের ভেলা (jhiler jole ke vashalo neel shaluker vela)
ঝিলের জলে কে ভাসালো নীল শালুকের ভেলা
মেঘ্লা সকাল বেলা।
বেণু-বনে কে খেলে রে পাতা-ঝরার খেলা।
মেঘ্লা সকাল বেলা॥
কাজল-বরণ পল্লী মেয়ে
বৃষ্টি ধারায় বেড়ায় নেয়ে,'
ব'সে দীঘির ধারে মেঘের পানে রয় চেয়ে একেলা॥
দুলিয়ে কেয়া ফুলের বেণী শাপলা মালা প'রে
খেল্তে এলো মেঘ পরীরা ঘুম্তী নদীর চরে।
বিজলিতে কে দূর বিমানে, সোনার চুড়ির ঝিলিক হানে,
বনে বনে কে বসালো যুঁই-চামেলির মেলা॥
- ভাবার্থ: পল্লী বাংলার বর্ষার অপরূপ চিত্রময়রূপকে কবি উপস্থাপন করেছেন বর্ধষা কন্যার সাজে। কবি এই বর্ষানন্দিনীর নানা রূপের সৌন্দর্যমোহকে সুর-ছন্দ-বাণীর প্রকাশ করেছেন। এই সৌন্দর্যেবৈভব দর্শনে তিনি কখনো মুগ্ধ হয়েছেন, কখনো বিস্মিত হয়েছেন।
কবির বিস্ময় এ কোন মেয়ে- যে মেঘলা সকালে ঝিলের জলে নীল শালুকের ভেলা ভাসায়, কে বেণু-বনে পাতা ঝরানোর খেলায় মেতে ওঠে। চিরন্তন বাংলার এই অপরূপা মেঘবর্ণ কন্যার কাজল-কালো বর্ণে কবি মুগ্ধ। এই কন্যা বৃষ্টিস্নাত হয়ে পল্লীর পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়। কখনো জনহীন দীঘির ধারে উদাসিনী মেঘের পানে চেয়ে রয়। কখনো এ কন্যার বেণী হয়ে ওঠে কেয়াফুলের দোলায়িত মঞ্জরী, কখনো সে শাপলা ফুলমালা পরিহিতা। এই বালিকার সঙ্গিনী হয়ে আসে যেন ঘুমতি নদীর মেঘপরীরা, কখনো দূর আকাশের মেঘের রথে বসে- এই মেঘবালিকার সুবর্ণ কঙ্কনের ঝিলিক বিজলী ছটায় আঘাত করে। তাই বর্ষার এত অঙ্গে এতরূপ-দর্শনে বিমোহিত কবির বিস্ময় থামে না। গানের শেষ পঙ্ক্তিতেও তা অনুরণিত হয়- এ কে এই বর্ষানন্দিনী, যে যুঁই চামেলীর মিলন মেলা বসা বন বনান্তরে।
- রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৪) মাসে এইচ.এম.ভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ২ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি । আগষ্ট ১৯৩৭। (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৪) এন ৯৯৩৫। শিল্পী: পারুল সেন [শ্রবণ নমুনা]
- পত্রিকা: ভারতবর্ষ। পৌষ ১৩৪৫ (ডিসেম্বর ১৯৩৮-জানুয়ারি ১৯৩৯)। স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: রশিদুন্ নবী । নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (দশম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, ৩ ফাল্গুন, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ। ১২ সংখ্যক গান] [নমুনা]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (বরষা)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: পা