তুমি আনন্দ ঘনশ্যাম আমি প্রেম-পাগলিনী (tumi anondo ghono shyam ami prem pagolini)
তুমি আনন্দ ঘনশ্যাম আমি প্রেম-পাগলিনী রাধা।
তব ডাক শুনে ছুটে যাই বনে আমি না মানি কুলের বাধা॥
শূন্য প্রাণের গাগরি ঘিরে
নিতি আসি রস-যমুনার তীরে
অঙ্গ ভাসায়ে তরঙ্গ-নীরে শুনি তব বাঁশি সাধা॥
যুগ-যুগান্ত অনন্ত কাল হৃদয়-বৃন্দাবনে
তোমাতে আমাতে এই লীলা, নাথ! চলেছে, সঙ্গোপনে।
মোর সাথে কাঁদে প্রেম-বিগলিতা
ভক্তি ও প্রীতি বিশাখা-ললিতা।
তোমারে যে চায়, মোর মতো, হায়! সার শুধু তার কাঁদা॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে কৃষ্ণপ্রেমে অধীর রাধার প্রেম-আকুলতা উপস্থাপিত হয়েছে- এক চিরন্তনী অলঙ্ঘনীয় বিরহ-কাতরতায়। এই বিরহ কাতরতা এক জনমের নয়, শুধু রাধার একার নয়। জগৎব্যাপী কৃষ্ণ-প্রেমে কাতর সকল সত্তার যেন চিরন্তন প্রাপ্তি।
এই গানে প্রেমে মত্ত রাধার কাছে কৃষ্ণ শুধুই মোহনীয় ও আনন্দময়। তাই কৃষ্ণের ডাক শুনে কুলের বাধা না মেনে রাধা ছুটে যায় বনে। কৃষ্ণসঙ্গ লাভের আশায় শূন্য কলস নিয়ে রাধা যমুনায় যায়। যমুনার জলে শূন্য কলস ভরার জন্য সে শুধু যায় না, সে যায় প্রেম-রসহীন শূন্য হৃদয় নিয়ে- হৃদয়ের প্রেম-রসযুমনায়- শূন্য হৃদয় পূর্ণ করার জন্য। প্রেম-যমুনার প্রেমতরঙ্গে অঙ্গ ভাসিয়ে, সে শোনে কৃষ্ণের বাঁশির সুরে বাধা প্রেম নিবেদন।
রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম-লীলা যুগযুগান্তরের চিরন্তন লীলা চলে হৃদয়-বৃন্দাবনে, সঙ্গোপনে। চিরন্তন কৃষ্ণ-বিরহে ব্যথিত রাধার সাথে ভক্তি ও প্রীতিতে কাঁদে তার সখীদ্বয়- 'বিশাখা-ললিতা'। এই বিরহে জগতে শুধু রাধা বা তার সখিরা কাঁদে এমন নয়- চিরন্তন প্রেমিক কৃষ্ণকে যারাই কামনা করে, তারাই কাঁদে। যেন এটাই অমোঘ নিয়ম।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর (বুধবার ১৪ আশ্বিন ১৩৪৩) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে নজরুল ইসলামের একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিপত্রে এই গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৪ মাস।
- রেকর্ড:
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (নবম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। ২ পৌষ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। সপ্তম গান] [নমুনা]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। রাধা-কৃষ্ণ লীলা। বিরহ
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: পা