একি সুরে (কোন্ সুরে) তুমি গান শোনালে ভিনদেশি পাখি (eki shure tumi gaan sonale)

একি সুরে (কোন্ সুরে) তুমি গান শোনালে ভিনদেশি পাখি
এ যে সুর নহে, মদির সুরা, রে সুরের সাকি॥
            বসি' মোর জানালা পাশে
            কেন বুক-ভাঙা নিরাশে
যাও ঘুম ভাঙায়ে নিতি সকরুণ সুরে ডাকি॥
তোর ও সুরে কাঁদছে ঊষা অস্ত চাঁদের গলা ধ’রে
ভোর-গগনের কপোল বেয়ে শিশির-অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
            আমি রইতে নারি ঘরে
            কেন প্রাণ কেমন করে
আমার মন লাগে না কাজে, আর জলে ভরে আঁখি॥

  • ভাবসন্ধান: জগত জুড়ে পরমসত্তার লীলা নানারূপে প্রকাশিত। এই লীলাই সুরে সুরে ডাক দিয়ে যায় কবিকে। এই গানের সুরের সাকি পরমসত্তা নিজেই। এই সাকি কবিকে ঘর বিবাগী উদাসী সুরে তাঁর চেনা জগতের বাইরে থেকে ডাকে, তাই কবির কাছে এই সাকি ভিনদেশী পাখি। কবির কাছে এই সুর সংসারের চিরচেনা সাধারণ সুর নয়। এই সুর পরমসত্তার পরমদর্শনের সুরার মতো মোহময়। এই গানে রয়েছে কবির সংসারের মোহ ত্যাগের বেদনা  আর পরম সত্তার সুরের মোহ গ্রহণের সাগ্রহের অন্তর্ন্দ্বান্দ্বিকতা।

    আশাহত কবি যখন সংসারের পরমবেদনায় তাঁর মনজগতের বাতায়নে বসেন, এই সাকি সংসারের মোহ থেকে জাগিয়ে তোলেন এবং ঘুম- জাগানিয়া দুরে সকাতরে আহ্বান করেন তাঁর পরমদর্শন গ্রহণের জন্য। পার্থিব স্বপ্ন রাত্রির মায়ালোকের চন্দ্রপ্রভার মতো। তার অবসান ঘটে জ্ঞান-ঊষার পর্মদর্শনে। নিশাবসনে সে মায়া ছেড়ে বেড়িয়ে এসে, কবির চৈতন্যে জাগে নব-প্রভাতের মতো পরমজ্ঞানের পরমদর্শন। তাই যেন, মায়াময় জগতের মায়া বিসর্জনের শেষ লগ্নে শেষ বিদায়ের বেদনায়- সে সুরের আহ্বানে উষা অস্তচাঁদের গলা ধরে কাঁদে। সে সুরের আহ্বান কবিকে ঘর বিবাগী করে তোলে। ঘর ছাড়ার নেশা তাঁকে অস্থির করে তোলে বলেই তাঁর কোনো কাজে মন বসে না। চিরচেনা সংসারের মায়া ত্যাগ করে বিবাগী হতে তাঁর মন হয়ে ওঠে ক্রন্দসী। ঘর ছাড়া আর ঘরে থাকার দ্বৈরথে কেটে যায় কবির যাপিত জীবন।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত 'সুর-সাকী' গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।  এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • সুর-সাকী
      • প্রথম সংস্করণ। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার ২৩ আষাঢ় ১৩৩৯)। গান সংখ্যা ৬০
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১।  সুর-সাকী। ৬০। ভৈরবী-দাদরা। পৃষ্ঠা: ২৬০]
  • পত্রিকা: সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রকাশিকা। ভাদ্র ১৩৩৯ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩২)। স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক ও উমাপদ ভট্টাচার্য। [নমুনা
  • রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩২ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৯)]। এন ৭০২৪। শিল্পী: গোপাল সেন। [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
    • জগৎ ঘটক ও উমাপদ ভট্টাচার্য। [সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। পৌষ ১৩৩৮ (ডিসেম্বর ১৯৩১-জানুয়ারি ১৯৩২] [নমুনা

      জগৎ ঘটকের সম্পাদিত 'নজরুল-সঙ্গীত আদি স্বরলিপি সংগ্রহ' গ্রন্থে লিখেছেন- 'গানটির 'তোর ও সুরে কাঁদছে ঊষা' হতে 'শিশির অশ্রু গড়িয়ে পড়ে' অংশটি শেয়রের ঢং-এ তালে আবদ্ধ নয় এবং আদি রেকর্ডেও (এন ৭০২৪, শিল্পী গোপাল সেন) সেভাবেই গীত হয়েছিল। এই স্বরলিপিতে এই অংশটি তালে আবদ্ধ করা হয়েছে।
    • এস.এম. আহসান মুর্শেদনজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (৩৫শ খণ্ড) [একুশে বই মেলা ২০১৩। নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] [নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সুফিবাদী। অন্তর্ন্দ্বান্দ্বিকতা।
    • সুরাঙ্গ: গজলাঙ্গ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।