এ কী হাড়-ভাঙা শীত এলো মামা (eki har-bhanga shit elo mama)

এ কী হাড়-ভাঙা শীত এলো মামা।
যেন সারা গায়ে ঘষে দিচ্ছে ঝামা॥
হইয়া হাড়-গোড় ভাঙা দ'
ক্যাঙারুর বাচ্চা যেন গো,
সেঁদিয়ে লেপের পেটে
কাঁপিয়া মরি, ভয়ে থ!
গিন্নি ছুটে এসে চাপা দেয় যে ধামা॥
বাঘা শীত,কাঁপি থরথর, যেন গো মালোয়ারির জ্বর,
বেড়ালে আঁচড়ায় যেন শাণিয়ে দন্ত নখর,
মাগো দাঁড়াতে নারি, চলি দিয়ে হামা॥
হাঁড়িতে চড়িয়ে আমায় উনুনে রাখো গো ত্বরায়,
পেটে মোর ভরিয়া তুলো বালাপোষ করো গো আমায়!
হ'ল শরীর আমার ফেটে মহিষ-চামা।
ওরে হরে! নিয়ে আয় মোজা পায়জামা॥

  • ভাবসন্ধান: তীব্র শীতকে এই গানে কবি তুলে এনেছেন রঙ্গরসের আধারে। বাংলা ভাষায় তীব্রশীতকে 'হাড়-ভাঙা শীত' প্রবচন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কবি অনেকটা আক্ষরিক অর্থে এই প্রবচনটিকে ব্যবহার করেছেন। তীব্র শীতে শরীরকে ভাঁজ করে বাংলা ‘দ' বর্ণের মতো করে কাঁথা বা লেপের নিচে আশ্রয় নেওয়া হয়। কবির ভাষায় তা হয়ে দাঁড়িয়েছে-‘হইয়া হাড়-গোড় ভাঙা দ’।

    কর্কশ ঝামা ঘষ্লে দেহে যে জ্বলুনির সৃষ্টি হয়, তীব্রশীত যেন সেরূপ ঝামা হয়ে কবির ত্বকে আঁচর কাটছে। ক্যাঙারুর বাচ্চা যেমন ওম ও নিরাপত্তার জন্য তার মায়ের পেটের থলিতে আশ্রয় নেয়, তীব্র শীতের আঘাত থেকে একইভাবে রক্ষা পাওয়ার জন্য কবিও তেমনি লেপের পেটে আশ্রয় নিয়েছেন। তীব্র শীতের কারণে শীত-কাতুরে কবি হতভম্ব। তাই স্বামীকে রক্ষার জন্য, কবির প্রতি-প্রাণা বধূ তাঁকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে।

    বাঘা শীতে (তীব্র শীত) কবি যেন ম্যালেরিয়া রোগীর জ্বরে আক্রান্ত দশার মতো কম্পমান। যেন বেড়াল রূপী শীত তার শাণ দেওয়া (সুতীক্ষ্ণ ও ধারালো) দন্ত-নখর দিয়ে শরীরে আঁচর কাটছে। এমন শীতে সোজা হয়ে চলতে পারেন না বলে, তিনি চলেন হামাগুড়ি দিয়ে। এমন শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, তিনি তাঁর গিন্নীকে ডেকে বলছেন- তাঁকে যেন হাঁড়িতে বসিয়ে জ্বলন্ত চুলার উপরে রাখেন। পেটের ভিতরে তুলো ঢুকিয়ে কবিকে বালাপোষ (লেপের ভিতরে দেওয়া অতিরিক্ত পাতলা লেপ) করার অনুরোধ করেছেন। এই তীব্রশীতে তাঁর শরীরের চামড়া ফেটে মহিষে চামড়ার মতো হয়ে গেছে। তাই কবি হরে নামক কোনো সেবককে দ্রুত মোজা-পায়াজামা আনার জন্য হুকুম করছেন।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আষাঢ় (জুলাই ১৯৩২) মাসে প্রকাশিত ' সুর-সাকী' গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • সুর-সাকী
      • প্রথম সংস্করণ [আষাঢ় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ। জুলাই ১৯৩২)]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। সুর-সাকী। ৯৪ সংখ্যক গান। পিলু-কার্ফা। পৃষ্ঠা ২৮৩]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ,[নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংখ্যা ২৩৬১।  রাগ: পিলু, তাল: দাদরা। পৃষ্ঠা: ৭১৮-৭১৯]
  • রেকর্ড: মেগাফোন  [নভেম্বর ১৯৩৩ (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪০)। জেএনজি ৮১। শিল্পী: শ্রীমতী রাজলক্ষ্মী (ছোট)]
  • অন্যান্য রেকর্ড: শিল্পী শফিকউদ্দিন আহমেদ [শ্রবণ নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি। ঋতু, শীত। রঙ্গরস

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।