তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় (tumi shundor tai cheye thaki priyo)

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ॥
        চেয়ে’ চেয়ে’ দেখি ফোটে যবে ফুল
        ফুল বলে না তো সে আমার ভুল
মেঘ হেরি’ ঝুরে’ চাতকিনী মেঘ করে না তো প্রতিবাদ॥
জানে সূর্যেরে পাবে না তবু অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়ে’ চেয়ে’ দেখে তার দেবতারে দেখিয়াই সে যে সুখী॥
        হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর
        পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর।
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর নয়নের সেই সাধ॥

  • ভাবার্থ: এটি প্রেম পর্যায়ের প্রশস্তিমূলক গান। দয়িতের অপরূপ সৌন্দর্যে সন্দর্শনে কোনো অপরাধ হয় কিনা, এই জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে এই গানের সূত্রপাত। স্থায়ী থেকে অন্তরা পর্যন্ত — নায়িকা, দয়িতের অপরূপ সৌন্দর্যে সন্দর্শনে কোনো অপরাধ হয় কিনা, তা খোঁজার চেষ্টা করেছেন নানা ধরনের প্রাকৃতিক উপকরণের উপমায়। চাঁদের কিরণের জন্য চকোরিণীর প্রত্যাশ্যা দেখে চাঁদ প্রতিবাদ করে না, কুঁড়ি থেকে ফুলের প্রস্ফুটন দেখে ফুল নিজের জীবনকে অর্থহীন মনে করে না, মেঘ দেখে উৎফুল্ল চাতকিনীর বৃষ্টির প্রত্যাশার ভিতরে মেঘ প্রতিবাদের কোনো কিছু খুঁজে পায় না। এই সকল উপমার ভিতর দিয়ে দয়িতের অপরূপ সৌন্দর্যে দর্শনের একটি সর্থন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, এই গানের নায়িকা।

সঞ্চারীতে ফুটে উঠেছে সম্ভোগহীন সৌন্দর্য-দর্শনের এক নান্দনিক অনুভূতি। সূর্যমুখী ফুল সূর্যকে পাবে না জেনেও সূর্যের সৌন্দর্য সন্দর্শনে‌ই সুখী। এই গানের নায়িকা মনে করেন দয়িতার মনোহর রূপ দেখার জন্যই দেখবার মতো চোখ পেয়েছেন। তাঁর প্রিয়তমের রূপ দর্শন অপরাধ নয়। এই দেখাতেই সে সুখী। তাই প্রিয়তমের কাছে তার আকুল আবেদন, যেন প্রিয়তম তার রূপ সন্দর্শনের পিপাসা মেটানোর সুযোগ দেন।

১. চাঁদের কিরণ পান করে তৃপ্ত লাভ করে এমন পাখি বিশেষের নাম চকোর। স্ত্রীলিঙ্গে চকোরিণী।

২. মেঘ থেকে ঝরে পড়া জল ছাড়া, অন্য জন জল পান করে না, এমন কল্পিত পাখি কাব্যে চাতক নামে অভিহিত হয়ে থাকে। স্ত্রীলিঙ্গে চাতকিনী।

  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯ ৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৯) মাসে এইচএমভি প্রথম এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ১ মাস।
     
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি। [জুলাই ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৯)।  রেকর্ড নম্বর এন ২৭২৯২। শিল্পী : চিত্তরঞ্জন রায়। সুরকার: চিত্তঞ্জন রায়[শ্রবণ নমুনা]
       
    • এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ (চৈত্র ১৫৪-বৈশাখ ১৩৫৪)। এন ২৭৮১৩। শিল্পী: কুমারী ইলা ঘোষ। সুর-নজরুল ইসলাম]

      এর জুড়ি গান ছিল: আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
       
    • এইচএমভি [জানুয়ারি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ (পৌষ-মাঘ ১৩৬৫)। এইচএমভি রেকর্ড। রেকর্ড নম্বর এন ৮২৮১৩। শিল্পী : সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। সুরকার: চিত্তঞ্জন রায়। [শ্রবণ নমুনা]
       
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ত্রিশতম খণ্ড,  নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা।  আষাঢ়, ১৪১৩/জুলাই ২০০৬] চিত্তরায়ের-এর রেকর্ডে গাওয়া গান অবলম্বনে কৃত স্বরলিপি। ১২ সংখ্যক গান। [নমুনা]
     
  • সুরকার:  রেকর্ড লেবেল ও রেকর্ড বুলেটিনের সূত্র তিনজন সুরকারের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন- নজরুল ইসলাম, চিত্তরঞ্জন রায় ও ধীরেন দাস। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা গ্রন্থে এ বিষয়ে লিখেছেন- 'তিনটি রেকর্ডের সুর একই; সুতরাং তিনজন সুরকার হতে পারে না। চিত্ত রায়ের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, নজরুলের সুর নিজের নামে গ্রহণ করা।
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রেম
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
    • তাল: দাদরা
    • গ্রহস্বর: সা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।