ওগো এলে কি শ্যামল পিয়া কাজল মেঘে (ogo ele ki shyamol piya)

ওগো   এলে কি শ্যামল পিয়া কাজল মেঘে
         চাঁচর চিকুর ওড়ে পবন বেগে॥
         তোমার লাবনি ঝ’রে পড়িছে অবনি-পরে
         কদম শিহরে কর-পরশ লেগে॥
         তড়িৎ ত্বরিত পায়ে বিরহী-আঁখিরে ছায়ে তরাসে লুকায়।
         চলিতে পথের মাঝে ঝুমুর ঝুমুর বাজে নূপুর দু’পায়।
         অশনি হানার ছলে প্রিয়ারে ধরাও গলে,
ওগো   রাতের মুকুল কাঁদে কুসুম জেগে॥

  • ভাবার্থ: প্রকৃতি পর্যায়ের এই গানটিতে- কবি বর্ষা ঋতুকে 'শ্যামল পিয়া' নামে অভিহিত করেছেন। এই 'শ্যামল পিয়া' প্রবল বায়ু তাড়িত কুঞ্জিত কেশ উড়িয়ে- বর্ষার কাজল মেঘের বাহনে প্রকৃতিতে আবির্ভূত হয়েছে। গানটিতে কবি বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন- দেখা-না দেখায় মেশা সন্ধ্যার ভাষার আশ্রয়ে।

    এই বর্ষাকন্যার লাবণ্য বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে ভূমিতে। তার করস্পর্শে কদম শিহরিত হয়। তার হঠাৎ চমকে ওঠা বিদ্যুৎ মুহুর্তে মিলায়। বিদ্যুতের এই চমকানো মুহুর্তে ঘটে বলে, কবি একে বর্ষাকন্যার তড়িৎ ত্বরিত গতির পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিরহীর যেমন তার চোখের বিরহকাতারতা সঙ্কোচে ভয়ে লুকায়, বর্ষাকন্যাও যেন সেই অনুভবে মূহুরতে লুকায়।

    বর্ষার অবিরাম ধারাপাতের শব্দকে কবি 'শ্যামল পিয়া'র দুই পায়ের নূপুরের ঝুমুর ঝুমুর শব্দের সাথে তুলনা করেছেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকে ভয়ে প্রিয়ার এবং তার প্রিয়তমের কণ্ঠ জড়িয়ে ধরে। এই বর্ষাকন্যা যেন ছলনা করে উভয়ের এই মিলন ঘটিয়ে দেয়। কবি এই শ্যামল পিয়াকে রাতের প্রেমের মুকুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই রাতের প্রেমের মুকুল যখন দিনের বিকশিত ফুল হয়ে ফুটে ওঠে, তখন সে যেন নবজাগরিত া প্রণয়ের আনন্দ-অশ্রুতে ভাসে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ (ডিসেম্বর ১৯২৯) মাসে প্রকাশিত 'চোখের চাতক' সঙ্গীত-সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩০ বৎসর ৬ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
  • চোখের চাতক
    • প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৬ (ডিসেম্বর ১৯২৯)। গান ২৯। কাজরি-কার্ফা]
    • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। চোখের চাতক। গান ২৯। কাজরি-কার্ফা। পৃষ্ঠা: ২১৪-২১৫।]
  • নজরুল গীতিকা
    • প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। কাজরি-কার্ফা। পৃষ্ঠা ১৪৩]
    • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭।]  নজরুল গীতিকা।  কাজরি-কার্ফা। ১১৭।  পৃষ্ঠা: ২৫৩]
  • রেকর্ড: টুইন। ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৩৮)। এফটি ৮৪৭। শিল্পী: হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়[শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বাবিংশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা ভাদ্র, ১৪০৭/ সেপ্টেম্বর, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ] সপ্তম গান। [নমুনা]
    পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, ঋতু, বর্ষা
    • সুরাঙ্গ: কাজরী
    • তাল: কাহারবা
    • গ্রহস্বর: গা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।