এলে কি স্বপন-মায়া (ele ki sopon maya)
এলে কি স্বপন-মায়া আমায় গান গাওয়াতে।
নিদাঘের দগ্ধ জ্বালা করলে শীতল পুব-হাওয়াতে॥
ছিলে যে পাষাণ-চাপা আমার গানের উৎস-মুখে।
তারে আজ মুক্তি দিলে ঐ রাঙা চরণ-আঘাতে॥
এলে কি বর্ষারানী নিরুশ্রু মোর নয়ন-লোকে।
বহালে আবার সুরের সুরধুনী বেদনাতে॥
এসেছ ঘুর্ণি হাওয়া হয়ত বা ভুল এক নিমেষের।
এসেছ সঙ্গে নিয়ে বজ্রভরা ঝঞ্ঝা-রাতে॥
তবু ঐ ভুল যে প্রিয় ফুল ফুটাল শুষ্ক শাখে।
আকাশের তপ্ত নয়ন জুড়িয়ে গেল ঐ চাওয়াতে॥
তোমার ঐ সোনার হাতের সোনার চুড়ির তালে তালে
নাচে মোর গানের শিখী মনের গহন মেঘলা রাতে॥
এলে কি তারার দেশের হারিয়ে যাওয়া সুরের পরী
শ্রান্ত বাণ-বেঁধা মোর গানের পাখির ঘুম ভাঙাতে॥
এলে আজ বাদলা শেষে ইন্দ্রধনুর রঙীন মায়া।
ছোটে সুর উজান স্রোতে, চোখ জুড়াল রূপ-শোভাতে॥
- রচনাকাল ও স্থান: নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে 'দার্জিলিং শনিবার রাত্রি।' উল্লেখ্য, ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন (রবিবার ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮) নজরুল নিজের গাড়ি নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দার্জিলিং ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণে অন্যান্যদের সাথে তাঁর সঙ্গিনী ছিলেন বর্ষবাণী পত্রিকার সম্পাদিকা সুন্দরী ও সাহিত্যরসিকা জাহানআরা চৌধুরী। দার্জিলিং- নজরুলের সাথে তাঁর বিশেষ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল। দার্জিলিং-এ অবস্থানকালে ২০শে জুন (শনিবার ৫ আষাঢ় ১৩৩৮) নজরুল এই গানটি জাহানআরা চৌধুরীর খাতায় লিখেছিলেন। এর শিরোনাম ছিল 'গান'। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ১ মাস।
- পত্রিকা: বর্ষবাণী। দশম বর্ষ ১৩৫৭।
- নজরুল পাণ্ডুলিপি: পাণ্ডুলিপি