তোমার বুকের ফুলদানিতে ফুল হব বঁধু আমি (tomar buker fuldanite)

তোমার বুকের ফুলদানিতে ফুল হব বঁধু আমি
শুকাতে হয় শুকাইব ঐ বুকে ক্ষণেক থামি'॥
ঐ নয়নের জ্যোতি হব তিল হব ঐ কপোলের
দুলব মণির মালা হয়ে ঐ গলে দিবস-যামি॥
অঙ্গে তোমার রূপ হব গো ধূপ হব মিলন-রাতে,
গহীন ঘুমে স্বপন হব জল হব নয়ন-পাতে (আমি)।
তোমার প্রেমের সিংহাসনে রানী হব, হে রাজা মোর।
চরণতলের ধূলি হব হে আমার জীবন-স্বামী॥

  • ভাবার্থ: পারশ্যের সুফিবাদী গজলের আদর্শে এই গানটি রচিত। এই গানের 'বধুঁ' পরমস্রষ্টা। কবি স্রষ্টারূপী পরমসত্তার সাথে নিবিড়ভাবে মিশে গিয়ে নির্বাণ লাভ করতে চান। তিনি স্রষ্টার অনন্তরূপে মিশে যেতে যান কখনো প্রেমিক হয়ে, কখনো প্রেমিকা হয়ে। গানের শুরুতে মনে হয় কবি স্রষ্টার পরম প্রেমিক পুরুষ। শেষ অন্তরাতে পাওয় যায় প্রেমিকারূপে রানী। অর্ধনারীশ্বরে সাথে মিলিত হয়ে নির্বাণলাভের জন্য কবির এই দ্বিচারিতা। সবশেষে তিনি স্রষ্টার চরণতলের ধূলি হতে চেয়েছেন পরম-আত্মনিবেদনের মাধ্যমে।


গানের স্থায়ীতে দেখা যায়-  স্রষ্টার প্রতি পরম অনুরক্ত কবি, তিনি নিজেকেই প্রেম-পুষ্পাঞ্জলী-রূপে অর্পণ করে তাঁর- ফুলদানিতে আশ্রয় লাভ করতে চান। কবি ভাবেন- যদি পরমস্রষ্টা তাঁকে অবহেলায় পরমপ্রেমিক হিসেবে গ্রহণ নাও করেন, তবুও তিনি পরম প্রেমিক হয়ে- তাঁর বুকেই যেন আশ্রয় লাভ করতে পারেন।

প্রথম অন্তরাতে কবি স্রষ্টার জগতকে দেখতে চান নয়নের জ্যোতি হয়ে, তাঁর সৌন্দর্যের অংশভাগী হতে চান ক্ষুদ্রতম তিল হয়ে, সর্বদা বিরাজ করতে চান গৌরবের মালা হয়ে। কবি স্রষ্টার অঙ্গরূপের অংশভাগী হতে চান। তিনি স্রষ্টার সাথে মহামিলনে গন্ধ-বিধুর ধূপ হতে চান। কবি স্রষ্টার ধ্যানমগ্ন-স্বপনে বিরাজ করতে চান আনন্দ-বেদনার দোলায়।

শেষ অন্তরাতে কবির প্রার্থনা- যেন তিনি তাঁর সকল ভক্তের মধ্যে শ্রেষ্টা হয়ে পরমস্রষ্টার প্রেম-সিংহাসনের রানী হতে পারেন। এখানে স্রষ্টাই তাঁর কাছে পরম আরাধ্য, পরম অধিকর্তা জীবন-স্বামী। কবি তাঁর কাছে আশ্রয়-প্রাথী হয়ে যেন করুণা ভিক্ষা করছেন। শেষের অন্তরাতে তাঁর শেষ নিবেদন, যদি স্রষ্টার পরম করুণালাভ বঞ্চিত হন, তাহলে যেম তাঁর পদরেণু হতে পারেন। শেষ অন্তরার শেষে নির্বাণলাভের জন্য কবির এই আকুলতা আরও প্রকট হয়ে ধরা পড়ে।

  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪০) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৯ মাস।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।