তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু (tomar mahabishwe kichhu haray na to kovu)
তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।
আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু॥
তোমার মতই তোমার ভুবন
চির পূর্ণ, হে নারায়ণ!
দেখতে না পায় অন্ধ নয়ন তাই এ দুঃখ প্রভু॥
ঝরে যে ফল ধূলায় জানি, হয় না তাহা (কভু) হারা,
ঐ ঝরা ফলে নেয় যে জনম তরূণ তরুর চারা —
তারা হয় না কভু হারা।
হারালো (ও) মোর প্রিয় যারা,
তোমার কাছে আছে তারা;
আমার কাছে নাই তাহারা — হারায়নিক' তবু॥
- ভাবার্থ: সনাতন হিন্দু ধর্মের বিশ্বের প্রতিপালক দেবতা হিসেবে নারায়ণ তথা বিষ্ণুর বন্দনা করা হলেও- এই গানের বন্দিত স্রষ্টা হিসেবে পরম-ব্রহ্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আক্ষরিক অর্থে গানটি বৈষ্ণব-সঙ্গীত হলেও, ভাবার্থের বিচারে তা একেশ্বরবাদের ভাবনায় সম্পৃক্ত। কারণ উপনিষদের একেশ্বরবাদী ভাবনায় পরম-ব্রহ্মই পরমার্থিক।
কবি তাঁর জীবন-দর্শনের মধ্য দিয়ে অনুভব করেছেন- মহান স্রষ্টার কল্যাণে এই মহাবিশ্বে যা কিছুর উদ্ভব হয়, তার কোনো কিছুই হারিয়ে যায় না। আমরা অবোধ মানুষ, তা বুঝতে না পেরে- পার্থিব মায়াময় প্রপঞ্চে হারিয়ে যাওয়ার বেদনায়- অন্ধ আবেগে বিলাপ করি। পরম স্রষ্টার মতই তাঁর ভুবন অসীম এবং চিরন্তন। তিনি সম্পূর্ণ বলেই জগৎ চির পূর্ণ হয়ে বিরাজ করে। তাই স্রষ্টার ভুবনে কিছু হারায় বলে মনে হয়, তার সবই স্রষ্টার অসীম ভুবনের অংশ হয়ে রয়ে যায়।
কবি মনে করেন যা হারিয়ে যায়, তা নবতর রূপে ফিরে আসে। মায়াময় পৃথিবীতে যে ফল ধূলায় পড়ে বিনষ্ট হয়, সেই ফল থেকেই জন্ম নেয় তরুণ তরু। সত্তার এই রূপান্তরের মধ্য দিয়েই হারিয়ে যাওয়া সব কিছই নব নব রূপে ফিরে আসে। প্রিয়জনের হারানোর বেদনায় অবোধ মানুষ বিলাপ করেন। মূলত পার্থব জগৎ থেকে হারিয়ে যান বটে, কিন্তু তাঁরা মৃত্যুর সীমানা পেরিয়ে স্রষ্টার কাছে আশ্রয় নেন বলেই- এই মহাবিশ্বের কোনো কিছুই হারায় না।
কবি তাঁর জীবন সার্বিক জীবন-দর্শনের মধ্য দিয়ে যে উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছেন, তাঁরই প্রতিফলন ঘটেছে এই গানে। তাই এই গানটি হয়ে উঠেছে ধর্মসঙ্গীত-ভিত্তিক মরমী গান।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪২) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ২ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি [আগষ্ট ১৯৩৫ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪২)। নম্বর ৭৩৯৩ শিল্পী: মৃণালকান্তি ঘোষ] [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, সাতাশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। কার্তিক, ১৪১২/অক্টোবর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] ১৮ সংখ্যক গান [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত (মরমী)
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: সা