দেবযানীর মনে প্রথম প্রীতির কলি জাগে। (debjanir mone prothom pritir koli jage)

দেবযানীর মনে প্রথম প্রীতির কলি জাগে।
কাঁপে অধর-আঁখি অরুণ অনুরাগে॥
          নব-ঘন-পরশে
          কদম শিহরে যেন হরষে,
ভীরু বুকে তা'র তেমনি শিহরণ লাগে॥
দেব-গুরু-কুমার ভোলে সঞ্জীবনী-মন্ত্র,
তপোবনে তার জাগে ব্যাকুল বসন্ত।
        নব-সুর-ছন্দ
        আনিল অজানা আনন্দ,
পূজা-বেদী তার রাঙিল চন্দন-ফাগে॥

  • ভাবসন্ধান: এই গানটি সৃষ্টির পিছনে ছিল নজরুলের দুটি সৃজনশীলসত্তার প্রকাশ। এর একটি হলো নতুন রাগ সৃষ্টির প্রেরণা। দ্বিতীয় প্রেরণা ছিল- সংস্কৃত ছন্দের অনুকরণে নতুন ছন্দের উদ্ভাবন। এই নতুন ছন্দটি হলো- নবনন্দন। নজরুল এই ছন্দটি এই গানে ২০ মাত্রার তাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

    নজরুল তাঁর নতুন রাগ 'দেবযানী'র সুরবিন্যাসকে এই গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার জন্য, এই গানটি রচনা করেছিলেন। রাগটির নামকরণ করেছিলেন হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র 'দেবযানী'র নামানুসারে। উল্লেখ্য হিন্দু পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারতের আদি পর্বের '৬৬-৬৭ অধ্যায়ের কচ- দেবযানী সম্পর্কিত উপাখ্যানটি পাওয়া যায়। এই উপাখ্যান থেকে জানা যায়- দেবতাদের আচার্য বৃহস্পতির পুত্র কচ, অসুরদের আচার্য শুক্রাচার্যের কাছে গোপনে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভের উদ্দেশ আসেন। নানা প্রতিকূলতা সহ্য করে কচ মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করেন। এই সময় শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেন। এই সূত্রে দেবযানী কচের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত হন। সঞ্জীবনী মন্ত্র লাভের পর কচের বিদায়কালে, দেবযানী তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু কচ তাঁকে গুরুকন্যা ভগ্নীসম, এই বাক্যে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দেবযানী কচকে বলেন  "হে কচ! তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করিলে তোমার সঞ্জীবনীবিদ্যা ফলবতী হইবে না।"

    গানের প্রথমাংশে কুমারী দেবযানীর প্রথম প্রণয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়েছে। সঞ্চারীতে দেখা যায়,  কচ দেবযানীর আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে সঞ্জীবনী মন্ত্র ভুলে যান এবং তাঁর মনে প্রণয়ের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। সেই সাথে জেগে উঠে নতুন সুর ও ছন্দ। পূজার বেদি হয়ে উঠে যৌবনারাগে রঞ্জিত। এই অংশটুকু মহাভারতের কচ-দেবযানীর কাহিনির সাথে মেলে না। এটুকু বাদ দিলে বলা যায়, গানটি একটি গাঢ় প্রণয়সঙ্গীত।
     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে (শনিবার ২৮ বৈশাখ ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৭.০৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে নজরুল-সৃষ্ট রাগ নিয়ে তৈরি 'নব রাগমালিকা' গীতিনাট্যের দ্বিতীয় পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। এই গানটি ছিল এই পর্বের প্রথম গান। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুলগীতি অখণ্ড রাগ-প্রধান গান। গান সংখ্যা ৮৭৩। দেবযানী-নবনন্দন তাল (হরফ, কলিকাতা। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪)।
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৪৯১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৪৮।
    • নবরাগ
      • নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ২য় গান। পৃষ্ঠা: ৪-৫।
      • হরফ প্রকাশনী। কবির ৭৩তম জন্মদিন, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ)। ২য় গান। পৃষ্ঠা: ১১-১২।
    • সুনির্বাচিত নজরুল গীতির স্বরলিপি, চতুর্থ খণ্ড (সাহিত্যম্‌, আশ্বিন ১৩৮৫‌। সেপ্টেম্বর ১৯৭৮)। ৭২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৫৫-১৫৬।
    • সন্ধ্যামালতী
      • প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৭৭ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭১)]
      • নজরুল রচনাবলী জন্মশতবার্ষিকী সপ্তম খণ্ড [১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫, ২৫ মে ২০০৮। সন্ধ্যামালতী, গান ৫২। পৃষ্ঠা: ১৫১]
    • বেতার:
      • নবরাগ মালিকা। দ্বিতীয় পর্ব। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ মে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৮ বৈশাখ ১৩৪৭)। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.০৫-৭.৪৪ মিনিট।  প্রথম গান। শিল্পী: শৈল দেবী]
        • সূত্র: বেতার জগৎ পত্রিকার ১১শ বর্ষ ৯ম সংখ্যার অনুষ্ঠান সূচী [পৃষ্ঠা: ৪৮৫]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
     
  • স্বরলিপিকার:
    • জগৎ ঘটক[নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)] [নমুনা]
       
  • বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি [প্রেম, পৌরাণিক]
  • সুরাঙ্গ: ধ্রুপদাঙ্গ
  • গ্রহস্বর: পঞ্চম।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।