দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে (dola lagilo dokhinar bone bone)
দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে
বাঁশরি বাজিল ছায়ানটে মনে মনে॥
চিত্তে চপল নৃত্যে কে
ছন্দে ছন্দে যায় ডেকে;
যৌবনের বিহঙ্গ ঐ ডেকে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে॥
বাজে বিজয়-ডঙ্কা তারই এলো তরুণ ফাল্গুনী,
জাগো ঘুমন্ত ─ দিকে দিকে ঐ গান শুনি’।
টুটিল সব অন্ধকার ─
খোলো খোলো বন্ধ দ্বার;
বাহিরে কে যাবি আয় সে শুধায় জনে জনে॥
- ভাবার্থ: এই গানটি প্রকৃতি পর্যায়ের জাগরণের গান। যেন এই গানটি বদ্ধ ঘরের দুয়ার খুলে বসন্তের সাড়া জাগানো আনন্দযজ্ঞের আসার আমন্ত্রণপত্র।
প্রকৃতির ঋতুরঙ্গের লীলায় বসন্তের দখিনা সমীরণের দোলা লাগে বনে বনে। তারই ভাবাবেশে কবির মনে বেজে ওঠে ছায়ানটের সুরলহরী। সে সুরের ছন্দে ছন্দে চপল নৃত্যের আহবান শুনতে পান কবি। তাঁর মনোবনের যৌবনবিহঙ্গ সে সুরে ক্ষণে ক্ষণে বেজে ওঠে।
শীতের স্থবির দশাকে পরাজিত করে, ফাগুন মাসে তরুণ বসন্ত তার বিজয় ডঙ্কা বাজিয়ে প্রকৃতিতে আসে। কবি এই তরুণ বসন্তের আগমনের ভিতরে - দিকে দিকে যৌবনবিহঙ্গের সাড়া জাগানো জাগরণী-ধ্বনির আহবান শুনতে পান। বসন্তের আগমনে দেহমনে আগে অন্ধকারের বন্ধন-মুক্তির আহ্বান। বসন্তের সাড়া জাগানো উৎসবে তিনি শুনতে পান- বসন্তের আনন্দযজ্ঞে সামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান-ধ্বনি। কবি তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে সে জাগরণের আসরে যোগ দিতে দ্বারে দ্বারে গিয়ে জনে জনে আমন্ত্রণ জানান।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। বেতার জগৎ পত্রিকার '১লা অক্টোবর ১৯৩৪ (সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৩৪১)' সংখ্যায় গানটি প্রথম স্বরলিপি-সহ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৮ মাস।
- রেকর্ড:
- বাসন্তিকা (রেকর্ড) নাটক। এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪১)। এন ৭৩৩৪। শিল্পী: ইন্দুবালা।
- টুইন [মার্চ ১৯৩৬ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪২)। এফটি ৪২৮৯। শিল্পী: ইন্দুবালা] [শ্রবণ নমুনা]
- পত্রিকা: বেতার জগৎ [১ অক্টোবর ১৯৩৪ (সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৩৪১)। স্বরলিপিকার: নলিনীকান্ত সরকার। পৃষ্ঠা ২৬১।] [নমুনা]
- বেতার: বাসন্তীকুঞ্জ [সঙ্গীতানুষ্ঠান] কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [২৭শে এপ্রিল ১৯৪০ (শনিবার ১৪ বৈশাখ ১৩৪৭)] সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.১৫-৭.৪৪।
[সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা। [১৬ এপ্রিল ১৯৪০] পৃষ্ঠা: ৪৩৩ - গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ৮৭৩
- বাসন্তিকা (একাঙ্ক নাটিকা)।
- অপ্রকাশিত নজরুল [১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল আজিজ সম্পাদিত]
- নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। বাসন্তিকা (একাঙ্ক নাটিকা)। প্রথম দৃশ্য। বাসন্তিকার গান। পৃষ্ঠা ৩৫৬-৩৫৭]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নলিনীকান্ত সরকার। বেতার জগৎ ৫ম বর্ষ ২৬শ সংখ্যা। [১ অক্টোবর ১৯৩৪ (সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৩৪১)। কথা ও সুর কাজী নজরুল ইসলাম। ছায়ানট-একতালা (জলদ্) স্বরলিপিকার নলিনীকান্ত সরকার। পৃষ্ঠা ২৬১-২৬৩] [নমুনা]
- আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। আষাঢ়, ১৪১৩/জুলাই ২০০৬] ইন্দুবালা-এর রেকর্ডে গাওয়া গান অবলম্বনে কৃত স্বরলিপি। ১৩ সংখ্যক গান। [নমুনা]
- পর্যায়: