দোলে বন-তমালের ঝুলনাতে কিশোরী-কিশোর (dole bon-tomaler jhulonate kishori-kishor)
বন-তমালের ঝুলনাতে কিশোরী-কিশোর (দোলে)
চাহে দুঁহু দোঁহার মুখপানে চন্দ্র ও চকোর,
যেন চন্দ্র ও চকোর প্রেম-আবেশে বিভোর॥
মেঘ-মৃদঙ বাজে সেই ঝুলনের ছন্দে
রিম্ ঝিম্ বারিধারা ঝরে আনন্দে
হেরিতে যুগল শ্রীমুখ চন্দে
গগন ঘেরিয়া এলো ঘন-ঘটা ঘোর॥
নীরদ দরশনে চাতকিনী প্রায় (নব)
ব্রজ-গোপিনী শ্যামরূপে তৃষ্ণা মিটায়
গাহে বন্দনা-গান দেব-দেবী অলকায়
ঝরে বৃষ্টিতে সৃষ্টির প্রেমাশ্রু-লোর॥
- ভাবসন্ধান: গানটির প্রেক্ষাপট বজ্রধামের বর্ষাকালিন ঝুলনোৎসব। কিন্তু গানটিতে ঝুলনের পূর্ণ রূপের পরিবর্তে- শৃঙ্গার রসের মহিমায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল রূপের বন্দনা করা হয়েছে নানা রূপকতার মধ্য দিয়ে।
গানের শুরুতে দেখা যায়- এই উৎসব উপলক্ষে বন-তমালের ডালে বাঁধা দোলনাতে কিশোর-কিশোরী (রাধা-কৃষ্ণ) দুলছেন প্রেমানন্দে। উল্লেখ্য এ গানের চন্দ্র হলো প্রেমময় চন্দ্রমুখ ও চকোরের হলো- সে মুখের প্রতি পর্স্পরের সতৃষ্ণ চাহনী। যেমন করে চাঁদের প্রেমময় স্নিগ্ধ আলো পান করার আকাঙক্ষায় সতৃষ্ণ চকোর পাখি চেয়ে থাকে চাঁদের দিকে । তেমনি ঝুলনের এই কিশোর-কিশোরী প্রেমাবেগে পরস্পরে চন্দ্ররূপী রূপদর্শনের আকাঙ্ক্ষায় পরস্পরের মুখের দিকে চেয়ে আছেন রূপ ও প্রেম পিয়াসী চকোরের মতো।
এই উৎসবে মেঘ-মৃদঙ (মেঘ রূপ মৃদঙ্গ) ঝুলনোৎসবকে করেছে ছন্দ-মুখর । সে ছন্দের আনন্দ যেন ঝরে পড়ছে বৃষ্টির রিম্ ঝিম্ ধ্বনি তরঙ্গে। চন্দ্ররূপী এই যুগল শ্রীমুখ দেখার জন্যই যেন আকাশকে আবরিত করেছে বর্ষার ঘন মেঘমালা। এই মেঘদর্শনের মাঝে ব্রজগোপিনীর চাতকিনীর মতো শ্যামরূপ দর্শনের তৃষ্ণা মেটায়। আর তা দেখে অলকায় দেবদেবীরা রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রেম-মূরতির বন্দনা গান গায়। বৃষ্টিধারার সাথে ঝরে পড়ে রাধাকৃষ্ণের নবতর প্রেম-রচনার আবেগাপ্লুত প্রেমানন্দের প্রেমাশ্রু। উল্লেখ্য অলকা মূলত যক্ষরাজ কুবেরের স্বর্গতূল্য নগরী। এ গানে স্বরপুরীকে প্রতীক হিসেবে অলকাকে নামে উপস্থাপন করা হয়েছ।
- রচনাকাল ও স্থান:গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৪) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময়ে নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ২ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। গান সংখ্য ৮২।
- রেকর্ড: এইচএমভি [আগষ্ট ১৯৩৭ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৪)। রেকর্ড নং এন ৯৯৩৪। শিল্পী: মানিকমালা। সুর: নজরুল ইসলাম। [শ্রবণ নমুনা]
- বেতার: 'ঝুলন' (গীতি-আলেখ্য)। রচয়িতা জগৎঘটক। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [২৯ আগষ্ট ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (মঙ্গলবার, ১২ ভাদ্র ১৩৪৬)। সান্ধ্য অধিবেশন। ৭.০০-৭.৫৯ মিনিট।
সূত্র:
- বেতার জগৎ: ১০ম বর্ষ ১৬শ সংখ্যার [পৃষ্ঠা: ৬৩৭]
- The Indian Listener. Vol. IV No 16 Page 1183
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। [ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] ১৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৮৭-৮৯। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব, ঝুলনোৎসব।
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল: কাহারবা
- গ্রহস্বর: সরা।