ও কে চলিছে বন-পথে একা নূপুর পায়ে রন ঝন ঝন্ (o ke cholichhe bono-pothe eka nupur paye)

ও কে চলিছে বন-পথে একা নূপুর পায়ে রন ঝন ঝন্।
তারি চপল চরণ-আঘাতে দুলিছে নদী-দোলে ফুলবন॥
ঝরে ঝর্ ঝর্ গিরি-নির্ঝর তার ছন্দ চুরি করে,
'এলো সুন্দর ─ এলো সুন্দর' বাজে বনের মর্মরে।
            গায় পাখি মেলি আঁখি
            বলে, বন-দেবী এলো নাকি?
মধুর রঙ্গে অঙ্গে-ভঙ্গে জাগে শিহরণ॥
সন্ধ্যায় ঝিল্লির মঞ্জির তার
ঝির্‌ ঝির্ শির্ শির্ তোলে ঝঙ্কার।
মধুভাষিণী সুচারু-হাসিনী সে মায়াহরিণী' ─
ফোটালো আঁধারে মরি মরি
অরুণ আলোর মঞ্জরি
দুলিছে অলকে আঁখির পলকে দোলন-চাঁপার নাচের মতন॥

  • ভাবসন্ধান: এটি প্রকৃতি পর্যায়ের বসন্ত ঋতুর গান। এই গানের বনসুন্দরী হলো শ্রীময়ী বসন্তরাণী। এই গানের বসন্তরাণী মূলত বসন্তের সকল সৌন্দর্যের একীভূত রূপ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। ফুলবন, গিরি-নির্ঝর, ঝিল্লীর ঝঙ্কার- এ সবের আনন্দ একীভূত ও সুসমন্বিত রূপে- বসন্তের পূর্ণ সৌন্দর্যকে উপস্থান করার প্রয়াস দেখা যায় এই গানে। 

    তার নৃত্যময় পদসঞ্চারে বনাঞ্চলের পুষ্পরাশিতে, চঞ্চল নদীতে সৌন্দর্যের দোলায়িত ছন্দ ওঠে। যেন তার ছন্দকে চুরি করে পাহাড়ি ঝর্না নৃত্যানন্দে প্রবাহিত হয়। যেন সচকিত প্রকৃতিতে প্রজ্ঞাপিত হয়- 'এলো সুন্দর- এলো সুন্দর'। এখানে এলো সুন্দর দুইবার উচ্চারিত হয়, প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়া বসন্তরাণীর ব্যাপ্তী বুঝাতে। এই সূত্রে পাখিরা সচকিত হয়ে ওঠে। তারা  গানে গানে প্রশ্ন তোলে প্রতীক্ষিত বনদেবীর বেশে আসা বসন্তরাণী 'এলো নাকি?'। বসন্তদেবীর রঙ্গলীলায় প্রকৃতির অঙ্গঅঙ্গে যৌবনের শিহরণ জাগে। সন্ধ্যায় ঝিল্লীরা সঙ্গী-সঙ্গিনীকে যৌবনানন্দের মঞ্জীর-ধ্বনিতে আহ্বান করে। সৌন্দর্যের এই মহিমা ছড়িয়ে বসন্তরাণী যেন- মায়াহরিণীর মতো ছুটে চলে। বিমূর্ত রূপে সে হয়ে ওঠে মধুভাষিণী, সুচারু-হাসিনী। কলুষতার অন্ধজগতে বসন্ত আসে সৌন্দর্যের বিভা ছড়িয়ে সৌন্দর্যে অরুণ হয়ে। তার অলকগুচ্ছে পলকে পলকে দোলায়িত হয় দোলনচাঁপার সনৃত্য সৌন্দর্যের  দোলা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪১)  মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৭ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড
      • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
      • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। ১৬৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪৪]
      • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ভৈরবী-গজল। ১৬৫ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ৩৩।
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৩৪। পৃষ্ঠা ১১]
    • নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড। স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ।  প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। পৌষ ১৪০২। ডিসেম্বর ১৯৯৫। ৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৫৫-৫৮]
       
  • রেকর্ড:
    • টুইন [জানুয়ারি ১৯৩৫ (পৌষ-মাঘ ১৩৪১)। এফটি ৩৭২৭। শিল্পী: মিস্ আশালতা। সুর: বিমল দাশগুপ্ত [শ্রবণ নমুনা]  [আফরোজা শারমিন পাপড়ি(শ্রবণ নমুনা)]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশনজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড।  দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়, পৌষ, ১৪০২ বঙ্গাব্দ/ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। নবম গান] [নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (বসন্ত)
    • সুরাঙ্গ: নৃত্যের ছন্দের রাগাশ্রয়ী
    • রাগ: ভৈরবী
    • তাল: তালফেরতা (দাদরা/ কাহারবা)
    • গ্রহস্বর: পা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।