ও কে মুঠি মঠি আবির কাননে ছড়ায় (o ke muthi muthi abir kanone chhoray)

ও কে মুঠি মঠি আবির কাননে ছড়ায়
রাঙা-হাসির পরাগ-ফুল আননে ঝড়ায়॥
তার রঙের আবেশ লাগে চাঁদের চোখে
তার লালসার রঙ জাগে রাঙা অশোকে
তার রঙিন নিশান দোলে কৃষ্ণচূড়ায়॥
তার পুষ্পধনু দোলে শিমুল শাখায়
তার কামনা কাঁপে গো ভোমরা পাখায়,
সে খোঁপাতে বেল-ফুলের মালা জড়ায়॥
সে কুস্‌মী শাড়ি পরায় নীল বসনায়
সে আঁধার মনে জ্বালে লাল রোশনাই
সে শুকনো বনে ফাগুন আগুন ধরায়॥

  • ভাবসন্ধান: গানটি শুরু হয়েছে প্রশ্ন, বিস্ময় বা কৌতুহল-বাচক 'ও কে' দিয়ে। এই গানে প্রত্যক্ষভাবে উত্তর পাওয়া যায় না। কিন্তু পরোক্ষভাবে এর উত্তর পাওয়া যায়, এই গানের 'ও কে'-এর উত্তর। মূলত এই গানের 'ও কে' হলো- ঋতুরাজ বসন্ত। এই ঋতুরাজই ফুল ফোটানোর খেলায়, নানবিধ পুষ্পসম্ভারে প্রকৃতিকে বর্ণাঢ্য করে তোলে। ঋতুরাজ যেন অশোক, কৃষ্ণচূড়া শিমূল, কুসমীর রক্ত-রাঙা পুষ্প-পরাগে- প্রকতিতে মুঠি মুঠি রক্তিম আবির ছড়িয়ে দেয়। সব মিলিয়ে প্রকৃতি হয়ে ওঠে পুষ্পহাসিনী।

    ঋতুরাজের এই পুষ্পিত রঙের খেলায় আবেশিত হয় চন্দ্রালোক, কমলা রঙের রাঙা অশোকের ফুলে জেগে ওঠে যৌবন-লালসা। কৃষ্ণচূড়ার উচ্চ শাখায় ঋতুরাজ যেন লাল ফুলের রঙিন নিশান উড়িয়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়। ঋতুরাজের পুষ্পধনু দোল খায় শিমূলের দোলায়িত ফুলে। এই পুষ্পধনু যেন মদনদেবের পুষ্পধনুর মতই। যেন এই পুষ্পধনুর প্রভাবে ভ্রমর যৌবন-কামনায় কম্পিত হয়।

    এত সব লালরঙের মাঝে সাদা বেলফুল বসন্তের বর্ণবৈচিত্র্যে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। ঋতুরাজ যেন প্রকৃতিরাণীর খোঁপায় সাদা বেল-ফুলের মালা জড়িয়ে দিয়ে আরো সুদর্শনা করে দেয়। নীল বসনায় (স্বপ্নিল বসন, কল্পলোকের পোশাক), কুস্‌মী ফুলের জাফরানি রঙের শাড়িতে প্রকৃতিরাণী সুশোভিতা হয়ে ওঠে। এই গানের উপসংহারে কবি ঋতুরাজের কল্যাণময় মহিমা উপস্থান করেছেন। কবি মনে করেন, বর্ণহীন প্রকৃতিতে ঋতুরাজ রক্তিম আলোর বর্ণোৎসবে আনে, প্রাণীহীন শুকনো বনে যৌবনের কামনা জাগিয়ে তোলে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর, (মঙ্গলবার ৬ কার্তিক ১৩৪১ গানটি প্রথম গানের মালা সঙ্গীত-সংকলনের প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৪ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • একশো গানের নজরুল স্বরলিপি। নবম খণ্ড। প্রথম প্রকাশ [আব্দুল আযীয আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৯ পৌষ ১৩৭৮। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭। ১৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৩৫-৩৮]
    • গানের মালা
      • প্রথম সংস্করণ [আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ২৩। চৈতী-খেমটা]
      • নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা ২৩। চৈতী-খেমটা।  পৃষ্ঠা ২০৬] পাঠ: মুঠি মুঠি আবীর ও কে কাননে ছড়ায়।
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড
      • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
      • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
      • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। চৈতী-খেমটা। ৬২৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১২৯]
      • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ভৈরবী-গজল। ১১৪০ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ২১৮।
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৩১। পৃষ্ঠা ১০]
    • নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড। স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। পৌষ ১৪০২। ডিসেম্বর ১৯৯৫। ৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪১-৪৪]
       
  • রেকর্ড: এইচএমভি  [মার্চ ১৯৩৫ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪১)। এন ৭৩৪৬। শিল্পী: শঙ্কর মিশ্র (মহম্মদ কাশেম]  [শ্রবণ নমুনা] 
  • পত্রিকা: সবুজ বাংলা। ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪১ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩৪)।
     
  • সুরকার: চিত্ত রায়
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বিতীয় খণ্ড। দ্বিতীয় মুদ্রণ। পৌষ, ১৪০২ বঙ্গাব্দ/ ডিসেম্বর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ। পঞ্চম গান] [নমুনা]
  • পর্যায়:

 


© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।