ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে (dhuli pingol jotajut mele)

ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে।
আমার প্রলয় সুন্দর এলে॥
পথে-পথে ঝরা কুসুম ছড়ায়ে
রিক্ত শাখায় কিশলয় জড়ায়ে,
গৈরিক উত্তরী গগনে উড়ায়ে –
রুদ্ধ ভবনের দুয়ার ঠেলে॥
বৈশাখী পূর্ণিমা চাঁদের তিলক
        তোমারে পরাব,
মোর অঞ্চল দিয়া তব জটা নিঙাড়িয়া
        সুরধুনী ঝরাব।
যে-মালা নিলে না আমার ফাগুনে
জ্বালা তারে তব রূপের আগুনে,
মরণ দিয়া তব চরণ জড়াব
হে মোর উদাসীন, যেয়ো না ফেলে॥

  • ভাবার্থ: সারঙ্গ রঙ্গ সঙ্গীতালেখ্যে জন্য রচিত এই গানের মাধ্যমে কবি শুদ্ধ সারঙ্গ রাগকে এই গানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। এই সঙ্গীতালেখ্যটি বেতারে প্রচারিত হয়েছিল চৈত্র মাসের দিকে। তা ছাড়া এই রাগ পরিবেশনের সময় দিবা দ্বিতীয় প্রহরের শেষভাগ। তাই এই গানটিতে তিনি শুদ্ধ সারঙ্গকে উপস্থাপিত করেছেন আসন্ন গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহরের আবহ অনুসরণে।

    গানটির স্থায়ীতে কবি ভক্তি ও প্রেমে আবেশিত সাধিকার রূপরঙ্গে- শুদ্ধ সারঙকে ধূলি-পিঙ্গ জটাধারী প্রলয়-সুন্দর শিবের আবাহনের মতো করে বরণ করেছেন। অন্তরাতে কবি তপ্ত দুপরের তপ্ত ও রুক্ষতার বর্ণনা করেছেন- প্রকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রেমপূর্ণ উপমায়। প্রহরান্তে টোড়ির পরে শুদ্ধ সারঙ্গের পরিবেশনের সময়। এই রাগের মধ্য দিয়ে যেন প্রহরান্তের রদ্ধ দ্বার খুলে দেয় গৌড় সারঙ্গ। আর সে দ্বার ঠেলে প্রহরের ঘরে প্রবেশ করে শুদ্ধ সারঙ। তপ্ত গ্রীষ্মের রুক্ষ দুপুরে যখন ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে ঝরে পড়ে, চৈত্র-বৈশাখের ধূলি-ঝড়ে আকাশ গৈরিক চাদরে ঢেকে যায়, তখনই এই রাগ পরিবেশনের সময়।

    এই রুক্ষ পরিবেশের মধ্য সুরসাধিকারূপী কবি শুদ্ধ সারঙকে বৈশাখীর ধূসর পূর্ণিমার মহিমা দিয়ে বরণ করতে চান। ধূলি-পিঙ্গল জটাকে অবলম্বন করে সুরধুনী (স্বর্গ-গঙ্গা) মর্তে আবির্ভূতা হয়েছিল। এই গানের সাধিকা  শিবরূপী শুদ্ধ সারঙের জটা নিঙাড়িয়ে সুরের ঝর্নাধারা প্রবাহিত করতে চান। শুদ্ধ সারঙের প্রকৃতি শান্ত এবং ঈষৎ গম্ভীর। প্রেমের স্নিগ্ধরূপ এই রাগে নিয়ে ফুটে উঠে না। বরং দগ্ধ দুপুরের জ্বালাময়ী রূপই এই রাগের প্রকৃত রূপ। সঙ্গীত সাধিকা প্রেমের মৃত্যু মেনে নিয়েই যেন, প্রেম-উদাসীন যোগীরূপী এই রাগের কাছে পরম ভক্তিতে আত্মনিবেদন করতে যান। সাধিকার একান্ত কামনা, যেন তাঁর অবহেলায় এই রাগের সুর-রূপায়ণে ব্যর্থ না হন।
     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল  (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), গানটি প্রথম সারঙ্গ রঙ্গ গীতি আলেখ্যের সাথে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১০ মাস।
     
  • গ্রন্থ: নজরুলগীতি-অখণ্ড,হরফ। নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৪৯৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৭৭।
  • বেতার:
    • সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)                
      • প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
          [সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১১শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ৩৪০, ৩৬৯]
      • দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২৩ নভেম্বর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)। তৃতীয় অধিবেশন। ৮.০০-৮.৩৯।
           [সূত্র:
        • বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ২২শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১২৮৬
      • তৃতীয় প্রচার: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৩ ফাল্গুন ১৩৪৮)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-১। তৃতীয় অধিবেশন। ৭.৪৫-৮.২৯।
            সূত্র:  The Indian listener. Vol VII. No 3, page 79
    • একক অনুষ্ঠান: শিল্পী গীতা বসু। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-১।  [মঙ্গলবার, ১ জুলাই ১৯৪১ (১৭ আষাঢ় ১৩৪৮)। প্রথম অধিবেশন। সকাল ৮০৫-৮.১৪।
          সূত্র:
      • বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ৩য় সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৭৫৪
      • The Indian listener. Vol VII. No 3, page 31
  • স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)]   [নমুনা]
  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।