নতুন খেজুর রস এনেছি মেটে কলস ভ’রে (notun khejur rosh enechhi mete kolosh vore)

নতুন খেজুর রস এনেছি মেটে কলস ভ’রে
ভিন গাঁ হতে এনেছি গো রস-পিয়াসি
ও আমার রস-পিয়াসি রসিক জনের তরে॥
          মিঠে রোদে শীতের দিনে
          তরুণ-বধু লও গো কিনে
ফাগুন-হাওয়া বইবে প্রাণে, ওগো হাল্‌কা-নেশার ঘোরে॥
মলিন মুখে দিয়ে দেখ নলিন খেজুর-গুড়
বাহির-ভিতর হবে তাহার মিষ্টিতে ভরপুর
           ওগো মিষ্টিতে ভরপুর।
           মোর তনুর চেয়ে অনেক বেশি
           মধুর এ রস ও বিদেশি,
রস না পিয়েও ঝিমিয়ো না গো নেশায় অমন ক’রে॥  

  • ভাবার্থ: খেজুর রস হলো- শীত ঋতুর  প্রাকৃতিক একটি বিশেষ উপহার। গ্রাম বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের সাথে খেজুরের রস মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে। শীতের ভোরে এই রস-বিক্রেতাদের  হাঁকডাক শোনা যায় গ্রামবাংলার পথে পথে, পাড়ায় পাড়ায়। এই গানের শুরু হয়েছে- এমন এক ভিন্নগ্রামের এক রসবিক্রেতার রস-পিয়াসীদের উদ্দেশ্য নতুন রস বিক্রয়ের ডাকের মধ্য দিয়ে। এই রসওয়ালার কাছে আছে স্বাদ গন্ধে অতুলনীয় খেজুরের নলেন রস।  উল্লেখ্য, শীতের শুরুতে খেজুরের গাছ কাটার পর সংগৃহীত রসকে বলা হয় নলেন রস। এই গানের ভিতরে রয়েছে- রস-পিয়াসীদের প্রলোভিত করার জন্য রস-ব্যবসায়ীর প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন।

    শীতের সকালের মিঠে রোদের তরুণ বধূকে রসিক রসওয়ালা প্রলোভিত করছে- সরস ভঙ্গীতে এই কথায়- যদি সে এই রস পান করে, তবে এই শীতের ভিতরেও অনুভব  করবে যৌবনের তপ্ত মধুর অনুভব। রসওয়ালা তার রসের প্রচারণা হিসেবে বলেছে- মনের বাহির অন্তরে যদি কোনো বেদনা থাকে- তবে তার সকল বেদনা দূর হয়ে যাবে এবং মনপ্রাণে মিষ্টরসের আনন্দময় অনুভব ছড়িয়ে দেবে এই রস।

    গানটি তালফেরতায় বাঁধা। কাহারবা তালে নিবদ্ধ শেষাংশ বিদেশী রসওয়ালার উদ্দেশ্যে যেন নায়িকা (হতে পারে এই গানের নববধূর কথা)- রঙ্গরসে খেজুরের রসের সাথে শৃঙ্গাররসের মিশ্রণ ঘটিয়ে দিয়ে মিশ্ররসের অবতাড়না করেছে। নববধু খেজরের রস পান করে বলে- দেহের যৌবন রসের চেয়ে- তার খেজুরের রস অনেক বেশি মধুর। তাই বিদেশী রসওয়ালার কাছে সে এই নিবেদন করছে, যেন খেজুরের রস না পান করে নববধুর যৌবন রসের নেশায় ঝিমিয়ে না পড়ে। গানটিতে তাল-ফেরতার ব্যবহারে সংলাপের আমেজ চলে এসেছে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড: টুইন [সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫)। এফটি ১২৫৩২। শিল্পী: রাধারাণী বসু। সুর: রঞ্জিত রায়] [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশনজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (নবম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। ২ পৌষ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। ১৩ সংখ্যক গান]   [নমুনা]
     
  • সুরকার: রঞ্জিৎ রায়।
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি ও প্রেম
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।