নয়ন মুদিল কুমুদিনী হায় (noyon mudilo kumudini hay)

নয়ন মুদিল কুমুদিনী হায়!
তাহার ধ্যানের চাঁদ ডুবে যায়॥
ভরিল সরসী তা’রি আঁখি-জলে
ঢলিয়া পড়িল পল্লব-তলে,
অকরুণ নিষাদের তীর সম অরুণ-কিরণ বেঁধে এসে গায়॥
কপোলের শিশির অভিমানে শুকালো,
পাপড়ির আড়ালে পরাগ লুকাল।
সরসীর জলে পড়ে আকাশের ছায়া
নাই সেথা তারা-দল, চাঁদের মায়া,
জলে ডুবে মেটে না প্রাণের তৃষা হৃদয়ের মধু তার হৃদয়ে শুকায়॥

  • ভাবার্থ: এই গানে শরতকালের প্রস্ফুটিত কুমুদিনীর (শালুক ফুল) রূপ-প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে শৃঙ্গার রসের সিক্ত করে। এই গানের প্রণয়িনী কুমুদিনীর প্রেমিক চাঁদ। প্রেমমগ্ন কুমুদিনী তার ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার মধ্য দিয়েই এই গানের সমাপ্তি ঘটে।

    রাতের সরোবরে প্রস্ফুটিত কুমুদিনী যেন তার দলপত্র মেলে চেয়ে থাকে তার ধ্যানের প্রিয়তম চাঁদের পানে। ভোরে চাঁদ ডুবে যায় বলেই সে যেন তার আঁখিপল্লবের মতো দলপত্র গুটিয়ে ফেলে। অভিমানে চন্দ্রৃরূপী প্রেমিকের বিদায়-অশ্রুতে সরোবর পূর্ণ  হয়ে যায়। ভোরের বেলায় অকরুণ সূর্যালোক শিকারীর নিক্ষিপ্ত তীরের মতো তাকে বিদ্ধ করে।

    প্রেমিকের বিদায়ে অভিমানিনীর কপোলের শিশির শুকিয়ে যায়। পাপড়ির আড়ালে সে তার যৌবন-কামনাকে লুকায়। আকাশের ছায়া পড়ে সরোবরে জলে পড়ে, সেখানে তার সঙ্গী তারকার দল থাকে না। থাকে শুধু প্রেমিক চন্দ্র এবং তার প্রেমঘন মোহিত মোহ। প্রেমার্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা-কাতর কুমুদিনীর আকাঙক্ষা সরোবরে ডুবেও যেন তার প্রণয়ের মধু-তৃষা মেটে না। তাই হৃদয়ের প্রেমমধু হৃদয়েই শুকায়।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৪৯৮।  রাগ: টোড়ি, তাল: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৩৫১]
    • সন্ধ্যামালতী
      • প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৭৭ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭১)]
      • নজরুল রচনাবলী জন্মশতবার্ষিকী সপ্তম খণ্ড [১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫, ২৫ মে ২০০৮। সন্ধ্যামালতী, গান ২৩। পৃষ্ঠা: ১৩৮]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, জাগতিক, পুষ্প, শৃঙ্গার

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।