নারায়ণী উমা খেলে হেসে হেসে (narayani uma khele)
নারায়ণী উমা খেলে হেসে হেসে
হিম-গিরির বুকে পাহাড়ি বালিকা বেশে॥
গিরি-গুহা হতে জ্যোতির ঝরনা ছুটে চলে যেন চল চরনা,
তুষার-সায়রে সোনার কমল যেন বেড়ায় ভেসে।
-খেলে হেসে হেসে।
মাধবী চাঁদ ওঠে কৈলাস-চূড়ে,
খেলা ভুলিয়া যায়, অনিমেষ চোখে চায়
পাষাণ প্রতিমা প্রায় সেই সুদূরে।
সতী-হারা যোগী পাগল শঙ্করে
মনে পড়িয়া তার নয়নে বারি ঝরে,
শিব-সীমন্তিনী পাগলিনী প্রায় ‘শিব শিব’ বলে ধায় মুক্তকেশে॥
- ভাবার্থ: হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে- দক্ষযজ্ঞানুষ্ঠানে দক্ষের মুখে সতী (দুর্গা) তাঁর স্বামী শিবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে আত্মাহত্যা করেন। তার বহু বছর পর দুর্গা হিমালয়ের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। হিমালয়ের বুকে পাহাড়ি চঞ্চল বালিকারূপী দুর্গা তাঁর পূর্বজন্মের কথা বিস্মৃত হয়ে হেসে খেলে বেড়ান। জ্যোতির্ময়ী সেই বালিকা যেন গিরিগুহা থেকে নির্গত চঞ্চল ঝর্নার মতো ছুটে চলেন। হিমালয়ের শ্বেতশুভ্র তুষার-সাগরের বুকে স্বর্ণকমল হয়ে ভেসে বেড়ান।
এমনি করে নারায়ণী উমার দিন কেটে যায় হেসে খেলে। কোন এক বৈশাখী রাতে হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে যায় কৈলাস-চূড়ায় উদ্ভাসিত চাঁদ। তিনি খেলা ভুলে অপলকে পাষাণ প্রতিমার মতো চেয়ে থাকেন। চন্দ্রদর্শনে তাঁর মনে পড়ে যায় চন্দ্রচূড় শিবকে। বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে উঠে আসেন, পূর্বজনমের স্মৃতি নিয়ে। মনে পড়ে যায় সতীহারা শিবকে। দীর্ঘ-বিরহ-কাতর গিরিনন্দিনীর অশ্রু ঝরে পড়ে তাঁর দু'চোখ বেয়ে। শিবের আসঙ্গ লিপ্সায় মুক্তকেশী পাগলিনীর মতো 'শিব, শিব' বলে ছুটে যান শিবসন্ধানে। এখানে নাটকীয়ভাবে শেষ হয়ে যায় এই গানের।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ভারতবর্ষ পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৬ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৯) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ১৯৭৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫৯৫।
- পত্রিকা: ভারতবর্ষ। [কার্তিক ১৩৪৬ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৯)। কথা ও সুর কাজী নজরুল ইসলাম। স্বরলিপি: জগৎ ঘটক। গান। নারায়ণী: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৭০৩-৭০৪] [নমুনা]
- মাসুদা আনাম [শ্রবন নমুনা] ,শুক্লা মণ্ডল [শ্রবন নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: জগৎ ঘটক [ভারতবর্ষ। কার্তিক ১৩৪৬ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৯)।
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়: