নিশি-ভোরে অশান্ত ধারায় ঝরঝর বারি ঝরে (nishi bhore oshanto dharay)

নিশি-ভোরে অশান্ত ধারায় ঝরঝর বারি ঝরে।
আকাশ-পারের বিরহীর বীণায় যেন সুর ঝুরে আকুল স্বরে॥
কাহার মদির নিঃশ্বাস আসে
বকুলের বনে ঝরা ফুল বাসে
কর হানি' দ্বারে যেন বারে বারে
'খোল দুয়ার' বলি' ডাকে ঘুমঘোরে॥
ডাকে কেয়া বনে ডাহুক কেকা
বিরহের ভার বহি কত আর একা
ম্লান হয়ে এলো চোখে কাজলের লেখা অশ্রু-লোরে॥

  • ভাবার্থ: নিঃসঙ্গ বর্ষার সাথে শৃঙ্গার রসের বিপ্রলম্ভ ভাবের বিরহমধুর অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে- প্রকৃতি ও প্রেমের যুগলবন্দী সঙ্গীতে। নিশি-ভোরের (প্রাক্-প্রভাত কাল) অবিরাম অশান্ত বৃষ্টির ধারায়, সঙ্গলীপ্সায় প্রেমিকার মনে জেগে ওঠে সঙ্গকামনা। তাই নিঃসঙ্গ প্রেমিকার কাছে অবিরাম বর্ষণ হয়ে ওঠে বিরহের অশ্রু। প্রকৃতির অবিরাম বর্ষণ তার কাছে হয়ে উঠেছে  আকাশ পারের বীণায় বাদিত  বিরহকাতর সুর।

    প্রেমিকা ঝরা বকুলের গন্ধে খূঁজে পায় প্রেমিকের প্রেমঘন মদির নিঃশ্বাসের সৌরভ। ঘরের দুয়ারে ক্ষুব্ধ বাতাসের আঘাতে ধ্বনিত শব্দ- প্রেমে আচ্ছন্ন প্রেমিকার কাছে মনে হয়- প্রেমিকের 'খোল দুয়ার' -এর অনুরোধ। দুর কেয়াবনে সঙ্গলাভের আশায় ডাকে ডাহুক ময়ূর। তাদের মতই প্রেমিকা নিঃসঙ্গ। অভিমানের অশ্রুতে তার চোখের কাজল ম্লান হয়ে যায়। বিপ্রলব্ধা এই নায়িকা বর্ষার মতোই ক্রন্দসিনী হয়ে ওঠে। এখানে বিরহিনী ও বর্ষা হয়ে ওঠে সমার্থক। তাই তার মনোলোকে বেজে ওঠে আকাশপারের বিরহী বীণা।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৪) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৬ মাস।
     
  • রেকর্ড: টুইন [নভেম্বর ১৯৩৭ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৪)। এফটি ১২১৪৭। শিল্পী: মীনা রায়। সুর: নজরুল ইসলাম[শ্রবণ নমুনা]
     
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, সপ্তম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫শে মে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ। ১২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭১-৭২[নমুনা]
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি ও প্রেম
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।