পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা-বিধৌত পূর্ব দিগন্তে (padma-meghna-burigonga-bidhouto)
পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা-বিধৌত পূর্ব দিগন্তে।
তরুণ-অরুণ-বীণা বাজে তিমির বিভাবরী অস্তে॥
ব্রাহ্ম-মুহূর্তের সেই পুরবাণী
জাগায় সুপ্ত প্রাণ জাগায় – নব চেতনা দানি
সেই সঞ্জীবনী বাণী শক্তি তার ছড়ায় পশ্চিমে, সুদূর অনন্তে।
উর্মিছন্দা শত-নদীত্রোত ধারায় নিত্য পবিত্র-সিনান-শুদ্ধ-পুরব বঙ্গ
ঘন বন-কুন্তলা প্রকৃতির বক্ষে সরল সৌম্য শক্তি-প্রবুদ্ধ-পুরব বঙ্গ!
আজি শুভলগ্নে তা’রি বাণীর বলাকা
অলখ ব্যোমে মেলিল পাখা,
ঝঙ্কার হানি যায় তার পুরবাণী
জীবন্ত হউক হিম জর্জর ভারত নবীন বসন্তে॥
ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা' গ্রন্থে [পৃষ্ঠা: ১৫৯৮] লিখেছেন- 'সম্ভবতঃ এটি কবিতা, গান নয়।'
- ভাবার্থ: এই গানে কবি পূর্ব বাংলার প্রাকৃতিক রূপ এবং দর্শনকে একটি আদর্শিক অবয়বে উপস্থাপন করেছেন। কবির প্রত্যাশা, পূর্ববঙ্গ যেন আশাহীন ভারতের জন্য জীবনদায়ী অমৃত এবং জ্ঞানের প্রেরণা হতে পারে।
পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা বিধৌত পূর্ববাংলা অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে এই গানটির অবতারণা করা হয়েছে। প্রভাতে এই বঙ্গের পূর্ব-দিগন্তে নবারুণের কিরণে উদ্ভাসিত হয়। কবু মনে করেন- অন্ধকার রাত্রির অবসানে সেই কিরণছটায় বেজে ওঠে অপার্থিব বীণার জ্ঞানালোকের মন্ত্রবাণী।
ব্রাহ্মমূহূরত্ত (সূর্যোদয়ের পূর্বের ৪৮ মিনিট) নবারুণের বীণার অপার্থিব পুরবাণী ঘুমন্ত পূর্ববাংলাকে জাগিয়ে তোলে। সেই বাণীই ধীরে সঞ্চালিত হয়, পশ্চিমের পথে সুদূর অনন্তের পানে। ঘন কেশের মতো বিরাজমান বনরাজি, প্রকৃতির বক্ষে বঙ্গদেশ হয়ে ওঠে সরল সৌম্য শক্তি ও জ্ঞানের প্রতীক। ব্রাহ্মমূহূর্তের পুরবাণী যেন বলাকার মতো পাখা মেলে দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে মহাকাশে ঝঙ্কার তোলে। সবশেষে কবি কামনা করেন- পূর্ববঙ্গের এই বাণী যেন হীমশীতল জরাজীর্ণ ভারতের বুকে নবীন্ বসন্তের উদ্দীপনায় জাগায়। যেন বঙ্গের বাণী হয়ে ওঠে প্রাণহীন ভারতের অমৃতসুধা। - রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
- গ্রন্থ:
- শেষ সওগাত
- প্রথম সংস্করণ [২৫শে বৈশাখ ১৩৬৫ (বৃহস্পতিবার, ৪ মে ১৯৫৮)। শিরোনাম: পূর্ববঙ্গ।]
- নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। শেষ সওগাত। পূর্ববঙ্গ। পৃষ্ঠা ১২১-১২২]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ৩০৬৬। রাগ: পৃষ্ঠা: ৯৩৯]
- শেষ সওগাত
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি ও উদ্দীপনা