পরজনমে যদি আসি এ ধরায়। (porojonome jodi ashi e dhoray)
পরজনমে যদি আসি এ ধরায়।
ক্ষণিক বসন্ত যেন না ফুরায়॥
মিলনে নাহি যেন রহে অবসাদ
ক্ষয় নাহি হয় যেন চৈতালি-চাঁদ,
কণ্ঠ-লগ্ন মোর প্রিয়ার বাহু
খুলিয়া না পড়ে যেন, নিশি না পোহায়॥
বাসি নাহি হয় যেন রাতের মালা,
ভরা থাকে যৌবন রস-পেয়ালা।
জীবনে না রহে যেন মরণ-স্মৃতি
পুরাতন নাহি হয় প্রেম-প্রীতি,
রবে অভিমান রহিবে না বিরহ,
ফিরে যেন আসে প্রিয়া মাগিয়া বিদায়॥
- ভাবসন্ধান: যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের অষ্টম গান। এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় পরজ রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। এই গীতি-আলেখ্যের পাণ্ডুলিপিতে নজরুল এই রাগের যে রূপ বর্ণনা করেছেন. তা হলো-
বেহাগের পর নিশীথের তৃতীয় প্রহরে কড়ি মধ্যম ধ'রে আনে চঞ্চল 'পরজ'কে। এঁর মান অত্যন্ত প্রবল ─ অর্থাৎ কড়ি মধ্যম ও নিখাদে এঁর অত্যন্ত প্রীতি। এর তীব্র নিখাদ ও মধ্যম ঘুমন্তের ঘুম ভেঙে দেয়। এর বিরহ যেন বিলাস। বসন্তের সাথে এর অত্যন্ত প্রীতি।
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে পরজ রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি রাত্রি তৃতীয় ও চতুর্থ প্রহরের সন্ধিরাগ। পরজ বসন্তকালীন রাগ। এই গানের শুরুর 'পরজনমে'-এর নমে শব্দ বাদ দিলে রাগ নাম 'পরজ' পাওয়া যায়। এই রাগের বিস্তার ক্ষেত্রটি রাগ বসন্তের চেয়ে সুপরিসর। তাই পরজের পরিবেশনা অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত। এই রাগে চৈতালি চাঁদের মতো রূপমাধুর্যে এবং শৃঙ্গার রসে ভরপুর। এই রাগের পরিবেশনকারীদের জন্য এই সত্যটি তুলে ধরা হয়েছে- গানটির অন্তারতে।
কবি অনন্ত যৌবনবসন্তের সম্ভোগ-আনন্দকে ধারণ করার কামনাকে ব্যক্ত করেছেন, পরজের মধুর সুর-সৌরভে। গানের স্থায়ীতে এই আশারই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় অন্তারাতে। কবি কামনা করেন, - যদি কখনও তিনি আবার পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন, তখন যেন এই ক্ষণিক যৌবন-বসন্ত না ফুরায়। যেন মিলনে অবসাদ না আসে, যেন চৈতালি চাঁদের পূর্ণতা হ্রাস না পায়। এবং রাত্রি যেন পোহায়, কণ্ঠলগ্না প্রেয়সীর বাহুবন্ধন শিথিল না হয়।
পরজের এই এই শৃঙ্গার রসের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে আভোগ ও সঞ্চারীতে। কবির সতর্ক বার্তা- কামনামদির নিশিপুষ্প যেন বাসি না হয়ে- যেন পূর্ণ থাকে যৌবনের রস-পাত্র। পূর্ব-জনমের মরণস্মৃতি যেন তাঁকে কাতর না করে, যেন প্রেম-সৌরভ চিরনূতন থাকে। যেন অভিমান করে প্রিয়ার দূরে চলে যাওয়ার বিরহ-বেদনা না থাকে, কখনও যদি প্রেয়সী দূরে চলেও যায়, যেন সে বিদায় নিয়েও আবার ফিরে আসে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (বুধবার ১৪ বৈশাখ ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৭.১৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে বাসন্তীকুঞ্জ নামক সঙ্গীতানুষ্ঠানে প্রথম প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৫২৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৫৮।
- একশো গানের নজরুল স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড (হরফ প্রকাশন। জানুয়ারি ২০০০)। ৯৮ সংখ্যক গান। মিশ্র বাগেশ্রী খাম্বাজ─কাহারবা। পৃষ্ঠা: ২৩০-২৩১।
- সুনির্বাচিত নজরুল গীতির স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড (সাহিত্যম্)। ৯১ সংখ্যক গান। মিশ্র বাগেশ্রী খাম্বাজ─কাহারবা। পৃষ্ঠা: ১৭৫-১৭৬।
- নজরুল গীতি, অখণ্ড (আব্দুল আজীজ আল-আমান, সম্পাদিত)। (হরফ প্রকাশনী। জানুয়ারি ২০০৪)। কাব্য-গীতি। গান: ৪৪৪। পরজ─তেতালা। পৃষ্ঠা: ১১৫।
- বেতার:
- বাসন্তীকুঞ্জ (সঙ্গীতানুষ্ঠান) ২৭ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (বুধবার ১৪ বৈশাখ ১৩৪৭)। সময়: সন্ধ্যা ৭.১৫।
- যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম। পরজ। ২২শে জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৬.৫৫।
- প্রহর পরিচারিকা। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ(শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.১৯
- রেকর্ড
- এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৫৪)। এন ২৭৭৮৭। শিল্পী: দ্বিজেন চৌধুরী। সুর : শৈলেশ দত্তগুপ্ত। মিশ্র বাগেশ্রী খাম্বাজ─কাহারবা।
- এইচএমভি [ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৫৪)। এন ২৭৭৮৭। শিল্পী: দ্বিজেন চৌধুরী। সুর : শৈলেশ দত্তগুপ্ত। মিশ্র বাগেশ্রী খাম্বাজ─কাহারবা।
- সুরকার:
- আদি সুর: কাজী নজরুল ইসলাম।
- পরিবর্তিত সুর: শৈলেশ দত্তগুপ্ত। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৫৪), এইচএমভি থেকে দ্বিজেন চৌধুরীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করার সময়, শৈলেশ দত্তগুপ্ত গানটির সুরান্তর ঘটিয়েছিলেন।
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- ড. রশিদুন্ নবী। নজরুল -সংগীত স্বরলিপি (৩৮তম খণ্ড)। নজরুল ইন্সটিটিউট। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ/ জুন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। গান সংখ্যা ২৫। পৃষ্ঠা: ১১০- ১১১ [নমুনা]
- পর্যায়