ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে কে (bhore jhiler jole shaluk)
ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে কে
ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী
ফুল দেখে বেভুল সিনান বিসরি'॥
একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে আকাশ-গাঙে অরুণ-গাগরি॥
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গ'লে পড়ে শত সে তরঙ্গে,
শারদ-আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
আলোক-মঞ্জরি প্রভাত বেলা
বিকশি' জলে কি গো করিছে খেলা
বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি'॥
- ভাবসন্ধান: কোনো এক ভ্রমর-কৃষ্ণকেশিনী কিশোরী প্রাতঃস্নানে এসেছে শালুক-পদ্মের ভরা ঝিলে। ঝিলময় ছড়ানো পদ্ম-শালুক দেখে সে স্নানের কথা ভুলে গিয়ে পুষ্পচয়নে মগ্ন হয়ে যায়।
কবিও মুগ্ধ হয়ে যান, শারদপ্রাতের পুষ্পশোভিত ঝিল আর পুষ্পচয়নরতা কিশোরীর সৌন্দর্য-দর্শনে। এ যেন জগতের নবতর এক সৌন্দর্যলীলা। তাঁর কাছে মনে হয় কিশোরী পদ্মফুলরূপিণী হয়ে ঝিলের পদ্ম তুলছে। তার অরুণ-বর্ণের গাগরি শরতের আকাশগঙ্গাকে ছাপিয়ে গেছে।
যেমন নিথর জলে আবেশিত সৌন্দর্য মহিমা শত তরঙ্গ হয়ে প্রকৃতিকে আচ্ছন্ন করে। তাকে আরো মহিমান্বিত করে শরতের মেঘ, যেন সে মেঘ খেলা করে উড়ন্ত বলাকার সাথে আনন্দরঙ্গে। ভোরের আলোকপুষ্প কিশোরীকমল আর ঝিলের কমলের সাথে চলে রঙ্গ। কিশোরীর আঁচলের ফুলও সৌন্দর্য-আবেশে, একই আনন্দে শিহরিত হয়। এই গানের কিশোরী কোনো পার্থিব মানবকন্যা নয়। কবি কল্পনায় শরতই মূর্তিমতী হয়ে উঠেছেন। কবি এই শারদসুন্দরীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে, তার রূপ বর্ণনা করেছেন এই গানে।
- পাঠান্তর: বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলীঅষ্টম খণ্ডে, 'মদিনা' নাটকে গানটি পাওয়া যায়। এই গানটির সাথে কবি নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত নজরুল সংগীত সংগ্রহের সাথে প্রচুর শব্দ-পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলী অষ্টম 'মদিনা' নাটকের এই সম্পূর্ণ গানটি উল্লেখ করা হলো। পৃষ্ঠা ৩০৩।
একা ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে কে
ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী?
আধেক অঙ্গ জলে, রূপের লহর তোলে
সে ফুল দেখে বেভুল সিনান বিসরি'॥
একি নতুন ছবি আঁখিতে দেখি ভুল,
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে ঝিলের জলে অরুণ-গাগরি॥
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢলঢল গলে পড়ে সে শত তরঙ্গে,
শারদ-আকাশে দলে দলে আসে মেঘ-বলাকা খেলিতে সঙ্গে!
আলোক-মঞ্জরি প্রভাত বেলা
বিকশি জলে কি গো করিছে খেলা?
আবেশে বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি'॥
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই(বৃহস্পতিবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৪৯) নজরুল কলকাতা বেতারকেন্দ্রে 'হারামণি' নামক লুপ্তরাগ অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান করার জন্য আসেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি গান করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সুস্থতার কিছু আগে নজরুল 'মদিনা' নামক একটি নাটকের খসড়া তৈরি করেছিলেন। এই নাটকের জন্যই তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৩ বৎসর ১ মাস।
- রেকর্ড: এইচএমভি অক্টোবর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৫৪)। রেকর্ড নং এন ২৭৭৪৮। শিলপী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্র। রাগ- জিলফ্। [শ্রবণ নমুনা]
- গ্রন্থ:
- নজরুল গীতি, অখণ্ড
- প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
- দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
- তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। রাগ-প্রধান গান। ৯২২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ২৩১]
- পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ৮৯৩ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ১৬৪।
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮।] গান ৯। রাগ: জিলফ, তাল: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা ৩]
- নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড) স্বরলিপিকার : সুধীন দাশ। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫] ৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৫৯-৬২]
- মদিনা। নজরুল রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ অষ্টম খণ্ডে [১২ই ভাদ্র ১৪১৫, ২৭শে আগষ্ট ২০০৮] ৬। আমার 'মদিনা' নাটকের জন্য আধুনিক গান (আমি গাইব)। জিলফ-তেতালা।। পৃষ্ঠা: ৩০৩। পাদটীকায় উল্লেখ আছে- 'শচীন দেব বর্মণ 'গাইবে' কেটে দিয়ে 'আমি' গাইব লিখেছেন। এছাড়া বেশ কিছু পাঠান্তর দেখানো হয়েছে ৭ থেকে ৮ সংখ্যক পাদটীকায়।
- নজরুল গীতি, অখণ্ড
- পত্রিকা। 'আমার মদিনা'।'নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা' জ্যৈষ্ঠ ১৩৯২ সংখ্যা। ষষ্ঠ গান/আমি গাইব (শচীন দেব বর্মণ গাইবে লিখে কেটে দিয়ে)
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। নবম গান] [নমুনা]
- স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ
- পর্যায়: