পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া বোলে (piu piu birohi papia bole)

পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া বোলে;
কৃষ্ণচূড়া বনে ফাগুন সমীরণে
ঝুরে ফুল বন পথতলে॥
নিশি পোহায়ে যায় কাহার লাগি
নয়নে নাহি ঘুম বসিয়া জাগি
আমারই মত হায় চাহিয়া আশা পথ
নিশীথের চাঁদ পড়ে গগনে ঢলে ॥

  • ভাবার্থ: 'যামযোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের প্রথম গান। নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে - এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় ললিত রাগের ভূমিকা এবং কড়ি মধ্যমের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

    নজরুলের পাণ্ডুলিপি পাঠ

এক অহোরাত্র আট প্রহরে বা যামে বিভক্ত। অর্থাৎ প্রতি তিন ঘন্টায় এক প্রহর বা যাম। সঙ্গীতের স্বর সপ্তকের মধ্যে কড়ি 'মা' বা তীব্র মধ্যম স্বর এই যাম বা প্রহর যোজনায় সেতু স্বরূপ। প্রতি প্রহরকে এই তীব্র মধ্যম যেন আহবান করে আনে আগত প্রহরের সাথে বিদায় প্রহরের পরিচয় ক'রে দেয়! নিশির শেষ প্রহরে যে রাগ গীত হয়, তার মধ্যে ললিত রাগ অন্যতম। ললিত রাগের শুদ্ধ ও তীব্র দুই মা। "পা" নেই বলেই বোধ হয় দুই মার কোলে ললিত রাগ লালিত হয়েছে। এই রাগের খেয়াল শুনুন। 'মা' এ রাগের প্রাণ।

​​​​​যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে ললিত রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এই গানটি মূলত ললিত রাগের ভাব-লক্ষণগীত। তাই এই গানে প্রথাগতভাবে রাগের আরোহণ-অবরোহণ, বাদী-সম্বাদী ইত্যাদির রূপ পাওয়া যায় না। ভাবের বিচারে এই রাগ করুণ। প্রহর বিদায়ের শেষে যে বিদায়-বেদনা জাগে, আর সে বেদনাকে উসকে দেয় এই রাগের কড়ি মধ্যম। আবার এই কড়ি মধ্যমই অন্য প্রহরের রাগে প্রবেশের জন্য হাত বাড়িয়ে রাখে। তাই এই কড়ি মধ্যম হয়ে ওঠে যাম-যোজনার যোজক।

নজরুলের মতে ললিত রাগের প্রাণ হলো মা। এই রাগে নিবদ্ধ গানের প্রাণ বিরহ, যা কড়ি মধ্যমে তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রহরের বিদায় লগ্নে বিরহবিধূর করুণরস ফুটে উঠেছে এই গানের বাণীতে। তাই এই গানের শুরুতে পাওয়া যায় 'পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া বোলে'। পাপিয়ার করুণ সুর যেন- বসন্ত বাতাসে প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া বেদনার অশ্রুধারার মতো বনেপথে ঝরে পড়ছে। বিরহের বেদনাবিধূর বিরহিণীর মতো নিদ্রাহীন রাত্রি কেটে যায় প্রত্যাশায়। কাব্যনায়িকা তার প্রিয়তমের প্রত্যাশায় যেমন রাত্রি অতিবাহিত করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে । তেমনি করে যেন রাতের জাগরিত চাঁদ, রাত্রি শেষে ব্যর্থ বেদনায় নুয়ে পড়ে আকাশের প্রান্তে ।

  • রচনাকাল স্থান:গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৫) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির প্রথম রেকর্ড করেছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১ মাস।
  • গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট । ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ৬৯৬ সংখ্যক গান।
     
  • বেতার:
    • যাম যোজনায় কড়ি মধ্যম। গীতি-আলেখ্য। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সান্ধ্য অধিবেশন। ৬.৫৫-৭.৪৪।
      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১২শ সংখ্যা। ১৬ জুন, ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ৬৫০-৬৫১  
    • প্রহর পরিচারিকা। গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯
      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ১০৫৮
  • রেকর্ড:   এইচএমভি। জুলাই ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৬)। এন ১৭৩১৯। শিল্পী: জ্ঞান গোস্বামী ।[শ্রবণ নমুনা] 
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সালাউদ্দিন আহ্‌মেদ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, অষ্টাদশ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। ১৮ সংখ্যক গান] [নমুনা]
     
  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।