পাপে তাপে মগ্ন আমি জানি জানি তবু। (pape tape mogno ami)
পাপে তাপে মগ্ন আমি জানি জানি তবু।
পাপের চেয়ে তোমার ক্ষমা অনেক অধিক প্রভু॥
শিশু যেমন সারা বেলায় ধূলা মাখে
খেলার শেষে সন্ধ্যাবেলায় মাকে ডাকে,
(ওগো) ধূলায় মলিন সে ছেলেরে মা কি ত্যাজে কভু॥
তোমার ক্ষমা যে দেখেছে হে মোর প্রেমময়,
অশেষ পাপে পাপী হলেও করে না সে ভয়।
মুছবে তুমি তুমিই যদি মাখাও ধূলি
কাঁদাও যদি তুমি নেবে কোলে তুলি,
আমি তাই করি যা করাও তুমি হে লীলাময় প্রভু॥
- ভাবসন্ধান: পরমসত্তার কাছে পাপে নিমজ্জিত পাপীর আত্মগ্লানিতে আত্মসমর্পণ এবং পরম করুণাময়রূপী পরমসত্তার মহিমাকে উপস্থাপিত করা হয়েছে এই গানে। কবির কাছে এই পরমসত্তা লীলাময়। সকল পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানুষের দুর্ভোগ এবং পরমসত্তার অনুগ্রহ সবই তাঁর লীলা মাত্র।
স্থায়ীর প্রথম পঙ্ক্তিতে ভক্ত কবি নিজেকে 'পাপে তাপে মগ্ন' বিশেষণের অভিহিত করে নিজেকে পর্ম সত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি জানেন যত পাপই থাক পরম করুণাময়ের ক্ষমা তার চেয়েও বেশী।
শিশু যেমন সারা বেলা খেলার ছলে ধূলা মেখে কলুষিত হয়, বেলা শেষে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করারা মায়ের শরণাপন্ন হয়। ধুলায় মলিন হয়েছে বলে মা শিশুকে ত্যাগ করেন না। তেমনি সারা জীবনে পাপ-পঙ্কিলে অমৃতের সন্তান-রূপী মানুষ কলুষিত ও মলিন হলেও. তার জীবন সায়াহ্নে পরম করুণাময় সন্তানকে ত্যাগ না করেন না, বরং তার কলুষতাকে পরিমার্জন করে কাছে টেনে নেন।
পরমসত্তার ক্ষমাসুন্দর প্রেমময় রূপ যে দেখেছে, সে অশেষ পাপ করেও তাঁকে ভয় পায় না। কারণ সে জানে যতই সে পাপপঙ্কিলতায় কলুষিত হোক, পরমসত্তা তাঁকে আশ্রয় দেবেনই। তিনি যদি কখনো তাঁকে ব্যথিত করেন, তবে তিনিই আবার পরমাদরে সন্তানের ব্যথা ভুলিয়ে কোলে তুলে নেবেন। সব শেষে ভক্ত পরম আত্মসমর্পণের সুরে পরম সত্তাকে বলেন- সংসারের ঘটমান সব কিছুই সেই পরমসত্তার লীলা। আর জগৎবাসী সে লীলার অংশভাগী মাত্র।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৩) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৮ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ১৫৫৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৬৭।
- নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি। সাতান্নতম খণ্ড। স্বরলিপিকার: ড. পরিতোষ মণ্ডল। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। পৃষ্ঠা: ৬৬-৬৯।
- রেকর্ড: টুইন [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৩)। এফটি ৪৭৭৫। শিল্পী আব্দুল লতিফ। সুর: কে. মল্লিক]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। পরমসত্তা। লীলা-বন্দনা
- সুরাঙ্গ: মিশ্র
- তাল: দাদরা
- গ্রহস্বর: পা