বন-ফুলে তুমি মঞ্জরি গো (bon-fule tumi monjori go)

   বন-ফুলে তুমি মঞ্জরি গো
            তোমার নেশায় পথিক-ভ্রমর ব্যাকুল হ'ল গুঞ্জরি' গো॥ 
তুমি       মায়ালোকের নন্দিনী নন্দনের আনন্দিনী
তুমি       ধূলির ধরার বন্দিনী, যাও গহন কাননে সঞ্চরি গো॥ 
            মৃদু পরশ-কুঞ্চিতা তুমি বালিকা
            বল্লভ-ভীতা পল্লব অবগুণ্ঠিতা মুকুলিকা।
তুমি       প্রভাত বেলায় মঞ্জরি লাজে সন্ধ্যায় যাও ঝরি'
             অরণ্যা-বল্লরি শোভা, পুণ্য পল্লী-সুন্দরী॥ 

  • ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতির জাগিতিক পর্যয়ের গান। বিষয় কচি বল্লব বেষ্টিত বনফুলের নবমুকুলিকা। কবি এই গানে নবমঞ্জরির মোহনীয় রূপের বিষয় তুলে ধরেছেন।

    এই গানের স্থায়ীতে কবি তার কল্পলোকে দেখতে পান- যেন নবমঞ্জরির মোহে মধু অন্বেষী ভ্রমরপথিক  ব্যাকুল হয়ে ওঠে, একে ঘিরে গুঞ্জন গুঞ্জন করে ফেরে।

    অন্তরাতে কবি কোনো এক মায়ালোকের কুমারের আনন্দদায়িনী, মায়াবতী কন্যা  হিসেবে এই নবমঞ্জরিকে উপস্থাপন করেছেন। যেন ভুল করে ধূলির পৃথিবীতে বন্দিনী সে। কবির চোখে সে ক্ষুদ্র কুঞ্জের যোগ্যা নয়, তাই তাকে সে অভয় দিয়ে গভীর বনে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

    সঞ্চারী আভোগে কবি এই নবমুকুলের প্রতি তার মুগ্ধতাকে অরণ্যে নবযৌবনার স্পর্শকাতরতা ও ভীরুতাকে শৃঙ্গার রসে উপস্থাপন করেছেন। কবি মনে করেন- নবমঞ্জরি দয়িতের প্রণয় পরশে নব বালিকার  মতো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। প্রেমিকের স্পর্শ আশঙ্কায় ভীতা হয়ে সে যেন, পাতার আড়ালে অবগুণ্ঠিতা হয়ে লুকিয়ে থাকে। প্রভাতের এই মঞ্জরি যেন সন্ধ্যায় সলাজে ঝরে পড়ে। কবির চোখে এই মঞ্চরি যেন অরণ্য-বল্লরীর সৌন্দর্য শোভিতা, যেন পল্লীর পূণ্যবতী অনন্যসুন্দরী।
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪২) এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড করেছিল। শিল্পী ছিলেন মিস্ সরযূ। রেকর্ডটি পরে বাতিল হয়ে যায় এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি [জুলাই ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪২)। শিল্পী: মিস্ সরযূ। পরে রেকর্ডটি বাতিল হয়।
    • এইচএমভি [মে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩)। রেকর্ড নং এন ৯৭২৬। শিল্পী:  কে.মল্লিক ও মানিকমালা। সুর: নজরুল ইসলাম। শ্রেণি- অর্কেস্ট্রা সম্বলিত। গৌড়সারং─তেতালা। [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:  সুধীন দাশ। [ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] ১৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১০১-১০২। [নমুনা]

  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ফুল)
    • সুরাঙ্গ: অর্কেস্ট্রা সম্বলিত গান।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।