বন-হরিণীর তব বাঁকা আঁখির (bono-horinir tobo baka akhir)

বন-হরিণীর তব বাঁকা আঁখির।
ওগো শিকারী, মেরো না তীর॥
ভীরু-হিরণী বনের ছায়ায়,
(চপলা) খেলে বেড়ায় সে অধীর।
তার সুখ-হাসি-সাধ ল’য়ে হে নিষাদ
            দিও না নয়নে নীর॥
আজো বোঝে না সে বাঁকা-চোখের ভাষা,
পিয়ার লাগি’ জাগেনি পিয়াসা।
সরল চোখে তার প্রেমের লালী
(নয়নে) ফোটেনি আবেশ মদির।
তার আয়নার প্রায় স্বচ্ছ হিয়ায়
আঁখিও না হায়, দাগ গভীর॥

  • ভাবার্থ: এই গানটিতে কবি বনের হরিণীর প্রেমঘন মায়াময় চোখের বর্ণনা করেছেন কল্পবাস্তবতার নিরিখে। গানটির স্থায়ীতে সৌন্দর্য পিয়াসী কবি শিকারীকে তার তীর দ্বারা এই বন-হরিণীর অপূর্ব বাঁকা চোখে আঘাত করতে নিষেধ করছেন।

    গানটির অন্তরাতে এই চোখের সৌন্দর্য এবং হরিণীর সাধ-ভালোবাসা কবির কল্পভাবনায় সম্প্রসারিত হয়েছে। এই ভীরু এবং চপলা বন-হরিণী আপন সুখ-হাসি-সাধ নিয়ে বনের ছায়া খেলে বেড়ায়। কবি শিকারীকে পুনরায় নিষেধ করেছেন, যেন তার তীরের আঘাতে ও আঁখিকে অশ্রুস্নাত না হয়।

    কবি মনে করেন, এই সরলা তরুণী হরিণী এখনো  বোঝে না প্রেমিকের বাঁকা-চোখের ভাষা। তার চোখে এখনো জাগে নি প্রিয়তমের জন্য আসঙ্গলিপ্সার পিপাসা। তার চোখে প্রেম-মদির আবেশের লালসাও নেই। তাই কবি নিষাদকে নিষেধ করে বলেন-  আয়নার মতো ওই স্বচ্ছ-চোখ তীরের আঘাতে ক্ষতের তৈরি না করে।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি  গীতি-শতদল সঙ্গীত সঙ্কলনের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ  (এপ্রিল ১৯৩৪) মাসে। এই সময় নজরুলের বয়স ৩৪ বৎসর ছিল ১১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গীতি-শতদল
      • প্রথম সংস্করণ [বৈশাখ ১৩৪১। এপ্রিল ১৯৩৪। পিলু- খেমটা]।
      • নজরুল রচনাবলী, পঞ্চম খণ্ড [বাংলা একাডেমী। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১ । গীতি-শতদল। গান সংখ্যা ২৩। পিলু- খেমটা। পৃষ্ঠা ২৯৭]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৫৯২।  রাগ: পিলু, তাল: খেমটা। পৃষ্ঠা: ৪৭৭]
  • রেকর্ড: মেগাফোন [১৯৩৪ (১৩৪০)। শিল্পী: শ্রীমতী রাজলক্ষ্মী (বড়)। রেকর্ডটি বাতিল হয়ে গিয়েছিল।]
  • পর্যায়: প্রকৃতি, জাগতিক, বনের হরিণী

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।