বল রাঙা হংসদূতি তা'র বারতা (bol ranga hongshoduti tar barota)
বল্ রাঙা হংসদূতি তা'র বারতা।
দাও তা'র বিরহ-লিপি, বল সে কোথা॥
কেমনে কাটে তা'র অলস বেলা
আজো কি গাঙের ধারে কাঁদে একেলা,
দু'জনের আশা-তরী ডুবিল যথা॥
দীপ জ্বালেনি কি কেউ তাহার ঘরে,
ভাঙা ঘর বেঁধেছে কি নূতন ক'রে।
দেখা হ'লে তা'রে কহিও নিরালায়
আমি মরিয়াছি ─ মোর প্রেম মরেনি, হায়!
(মোর) অন্তরে সে আজো অন্তর-দেবতা॥
- ভাবসন্ধান: এটি সারঙ্গ-রঙ্গ গীতি-আলেখ্যের প্রথম প্রচারের সপ্তম গান। রক্ত হংসসারং রাগে নিবদ্ধ এই রাগে নিবদ্ধ গানটি মেঘদূতের আভাষ মেলে। এখানে রক্তবর্ণে স্বরূপ রাঙা হংস হলো রক্তহংস রাগ, যা সারং অঙ্গের। এই গানের দূত রাঙা হংস মূলত রক্ত হংসসারং রাগ।
মেঘদূতের মেঘকে যক্ষ পাঠিয়েছিল- প্রেয়সীর কাছে তার বিরহকাতর বার্তা পাঠানোর জন্য। প্রেমিকা যেন তা রক্ত হংসের মুখ থেকে ছেড়ে আসা প্রেমিকের কথা জানতে চান।
কোনো এক দূরদেশে কোনো এক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেমের নদীতে তাঁদের প্রেমের তরী ভাসিয়েছিল। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটেছিল। বিচ্ছেদের পরেও এদের প্রেম ম্লান হয়ে যায় নি। বিচ্ছেদের অনলে দগ্ধ প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে বিরহ-লিপি পাঠায় রাঙাহংসকে দূতি করে।
প্রেমিকা এই লিপির –প্রাপ্তির প্রত্যাশয় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে। অবশেষে প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে বিরহ-লিপি পাঠায় রাঙা হংসদূতির মাধ্যমে। যেন নজরুলের রচিত অপর একটি গান ‘পরদেশী মেঘ যাও রে উড়ে’-এর ঘটনা পরম্পরা। প্রেমিকা এই বিরহ-লিপির বার্তা পাঠের আগেই- রাঙা হংসদূতির মুখে তার ছেড়ে আসা প্রেমিকের কথা জানতে চেয়েছে। প্রেমিকা জানতে চেয়েছে- কেমন করে তাঁর প্রেমিকের কর্ম-অবসরের অলস বেলা কাটে। যে প্রেম নদীতে তাদের প্রেমের তরী ডুবেছিল, সে নদীর তীরে কি প্রেমিক এখনও বিলাপ করে।
সহজাত নারীসূলভ কৌতুহলে সে জানতে চায়, তার প্রেমিক কি তার ছেড়ে আসা প্রেমের ভাঙাঘর অন্য কেউ বেঁধেছে। সেখানে কি কেউ প্রেমের দীপ জ্বেলেছে নতুন করে। প্রেমিকা ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার শেষে প্রেমিককে প্রেমের শেষ বাণী শোনায়- ‘আমি মরিয়াছি─ মোর প্রেম মরেনি, হায়/ (মোর) অন্তরে সে আজো অন্তর-দেবতা’।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল (শুক্রবার, ৩ চৈত্র ১৩৪৬), সন্ধ্যা ৭.১৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে সারঙ্গরঙ্গ নামক গীতিআলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর ১৫৮২ সংখ্যক গান। রাগ : রক্তহংস সারং, তাল : আদ্ধা পৃষ্ঠা: ৪৭৪।
- বেতার:
- সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)
- প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
[সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১১শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ৩৪০, ৩৬৯] - দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২৩ নভেম্বর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)। তৃতীয় অধিবেশন। ৮.০০-৮.৩৯।
[সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ২২ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১২৮৬] - তৃতীয় প্রচার: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৩ ফাল্গুন ১৩৪৮)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-১। তৃতীয় অধিবেশন। ৭.৪৫-৮.২৯।
[সূত্র: The Indian listener. Vol VII. No 3, page 79]
- প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
- হারমাণি। রাগ রক্ত হংস সারঙ্গ। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৩৪৭)। সান্ধ্য অধিবেশন। ৭.২০-৭.৩৯ মিনিট। শিল্পী: কাজী নজরুল ইসলাম
- সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ২৪শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১৩১৮।
- সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ২৪শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১৩১৮।
- সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ২১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫২-৫৩।] [নমুনা]
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম (বিরহ)
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
- রাগ: রক্তহংস সারং
- তাল: আদ্ধা
- গ্রহস্বর: সা।