ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি হায় সন্ধ্যায় (bheshe ashe shudur sritir shurobhi)

ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি হায় সন্ধ্যায়
রহি' রহি' কাঁদি' ওঠে সকরুণ পূরবী, আমারে কাঁদায়॥
কা'রা যেন এসেছিল, এসে ভালোবেসেছিল।
ম্লান হ'য়ে আসে মনে তাহাদের সে-ছবি, পথের ধুলায়॥
কেহ গেল দ'লে ─ কেহ ছ'লে, কেহ গলিয়া নয়ন নীরে
যে গেল সে জনমের মত গেল চলিয়া এলো না, এলো না ফিরে।
কেহ দুখ দিয়া গেল কেহ ব্যথা নিয়া গেল
কেহ সুধা পিয়া গেল কেহ বিষ করবী তাহারা কোথায় আজ
                            তাহারা কোথায়॥

  • পাঠভেদ: বুলবুল পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৩ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৬) সংখ্যায় গানটির স্থায়ী ছাপা হয়েছিল- '‌ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির ম্লান সুরভি'। এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর [অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯] মাসে, নিতাই ঘটকের সুরে গানটির রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। রেকর্ডকৃত গানে 'ম্লান' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
     
  • ভাবার্থ: এটি একটি স্মৃতিকাতরতামূলক সব হারনোর বেদনায় গ্রথিত গান। ফেলে আসা দিনের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির স্মৃতি-রোমন্থন উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে এই গানে। গানটির সর্বাঙ্গ জুড়ে রয়েছে স্মৃতি রোমন্থনের মধ্য দিয়ে হারানোর হাহাকার। জীবনের শেষ বেলায় এসে কবি অনুভব স্মরণ করেছেন জীবনের বাঁকে বাঁকে ফুটে ওঠা পুষ্পময় দিনগুলো কালস্রোতে ঝরে গেছে, কিন্তু তার সৌর্ভটুকু্ যেন বিচিত্র অনুভবে স্পর্শিত হয়ে জেগে উঠে মনের দৃশ্যপটে। সায়ংকালীন রাগ পূরবীর বিষণ্ণ সুরে তাঁর স্মৃতিকাতরতা বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে।

    দূর অতীতের ফেলে আসা দিনে তাঁর কাছে কা'রা এসেছিল, ভালোবেসেছিল, তা যেন স্মৃতি-বিস্মৃতিতে মেশা। 'কা'রা যেন' শব্দগুচ্ছে  ভোলা-না-ভোলা'র সংশয়কে প্রকাশ করেছে। ম্লান হয়ে যাওয়া সে সব স্মৃতি, জীবন পথের ধুলায় রেখে যাওয়া অপসৃত পদচিহ্নের মতো। জীবনের চলার পথে, কেউ তাকে দলে (অপমানিত, লাঞ্ছিত, উৎপীড়িত অর্থে) গেছে, কেউ ছলে (ছলনা, প্রতারণা অর্থে) গেছে। কেউ বা অবহেলা বেদনার আঘাতের চোখের জল ফেলতে ফেলতে চলে গেছে। তার কেউ আর ফিরে আসে নি। এদের কেউ দুঃখ দিয়েছে, কেউ বা কবির কাছে দুঃখ পেয়ে গেছে। তাদের কেউ প্রেম ও প্রশান্তির অমৃত পান করেছে, কেউ বা অশান্তির বিষ (করবী এখানে বিষের উদাহরণ মাত্র) পান করে চলে গেছে। তারা আজ কোথায়? গানটির  শেষ শব্দগুচ্ছ্ 'তাহারা কোথায়'-তে স্মৃতিকাতরতাকে হাহাকারে পরিণত করেছে।
     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। বুলবুল পত্রিকার কারতিক ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৬) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৫ মাস।
  • গ্রন্থ:
  • নজরুল গীতি, অখণ্ড 
    • প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮]
    • দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই ১৯৮১]
    • তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। কাব্য-গীতি। ৫৯০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ১৫২]
    • পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ৫৮৬ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা: ১১১।
  • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮] গান ১১। পৃষ্ঠা ৪]
  • নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। স্বরলিপিকার: সুধীন দাস। § প্রথম খণ্ড। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫] ১১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৬৭-৬৯]
     
  • পত্রিকা:
    • বুলবুল। কার্তিক। কারতিক ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৬)
    • সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। পৌষ ১৩৪৯। ডিসেম্বর ১৯৪২-জানুয়ারি ১৯৪৩। স্বরলিপিকার: বিজলী ধর। সুর - নিতাই ঘটক। রাগ - মিশ্র মারোয়া। [নমুনা]
       
  • রেকর্ডসূত্র:
    • এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাস। সুর করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রেকর্ডটি বাতিল হয়।
    • এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯৪৩, অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯। কথা: কাজী নজরুল ইসলাম। সুর: নিতাই ঘটক। স্বরলিপি: কুমারী বিজলী ধর। 
       
  • সুরকার:
    • কাজী নজরুল ইসলাম। [রেকর্ড সূত্র]
    • নিতাই ঘটক [সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা পত্রিকা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: 
  • পর্যায়
    • বিষয়াঙ্গ: স্মৃতিকাতরতা
    • সুরাঙ্গ: রাগাশ্রী
    • গ্রহস্বর
      • সন্ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি প্রথম খণ্ড কবি নজরুল ইন্সটিটিউট)। পৃষ্ঠা ৬৭]
      • ন্। [সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা (পত্রিকা)]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।