বসন্ত এল এল এল রে (boshonto elo elo elo re)

 বসন্ত এলো এলো এলো রে
 পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে
 মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।
 মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
 ভ্রমর গুঞ্জে গুন্‌গুন্‌ গানে॥
 পিয়া পিয়া ডেকে ওঠে পাপিয়া
 মহুল, পলাশ বন-ব্যাপিয়া
 সুরভিত সমীরণ চঞ্চল উন্মন
 আনে নব-যৌবন প্রাণে॥
 বেণুকার বনে বাঁশি বাজে
 বনমালী এলো বন-মাঝে
 নাচে তরু-লতিকা যেন গোপ-গোপিকা
 রাঙা হয়ে রঙের বানে॥

  • ভাবার্থ: কোকিলের কুহু কুহু স্বরের আহ্ববানের মধ্য দিয়ে ঋতুচক্রে বসন্তের আগমন বার্তা ঘোষিত হয়েছে এই গানে। এ গানের স্থায়ীর পঞ্চম শব্দটি স্বরসপ্তকের পঞ্চম (পা) নয়। আভিধানিক অন্য অর্থে কোকিলের প্রণয়ের আহ্বান বা কোকিলের ডাককে  বলা হয় পঞ্চম। প্রাচীন ভারতের লৌকিক গানে, স্বরসপ্তকে পঞ্চম নামটি গ্রহণ করা হয়েছিল কোকিলের ডাকের সাথে তুলনা করে। ঋতুচক্রে বসন্ত যৌবনের প্রতীক। তাই কবি এই গানে পঞ্চম স্বরে কোকিলের প্রণয়ের আহ্বানের কুহুকুহু উপমায় বসন্তকে আবাহন করেছেন।

    বসন্তে জেগে ওঠে প্রকৃতির বর্ণাঢ্য যৌবনের খেলায়। তাই মাধবী কুঞ্জে, মহুল, পলাশ বনে চলে ফুল ফোটানোর খেলা। এ্‌ই খেলার অংশভাগী হয়ে ভ্রমর গুনগুন গানে, পাপিয়ার পিউ পিউ আহ্বানে প্রকটীত হয়ে ওঠে যৌবনের শৃঙ্গার-উৎসব। এসবের মধ্যে কবি শুনতে পান বেনুকার বনে বনমালী (কৃষ্ণের) অভিসারের বংশীধ্বনি। সে ধ্বনিতে যেন তরু-লতিকা গোপ-গোপিকার মতো রাশ-নৃত্যে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রেমের বৃন্দাবন।
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৩) টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৮ মাস।
     
  • রেকর্ড: টুইন [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৩)। এফটি ৪৮৩২। শিল্পী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়।]  [শ্রবণ নমুনা]
     
  • বেতার: হারামণি। রাগ: বসন্ত-পঞ্চম। কলকাতা-ক। তৃতীয় অধিবেশন [২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ (মঙ্গলবার ১৩ ফাল্গুন ১৩৪৭)। প্রচার সময়: রাত ৮.২৫-৮-৩৯।
         [সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা। অনুষ্ঠানসূচী। পৃষ্ঠা: ২১৬]
     
  •  স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আসাদুল হক। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। পৃষ্ঠা: ৮১-৮৩] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • বিষয়াঙ্গ:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বসন্ত)।
    • সুরাঙ্গ
    • গ্রহস্বর: পর্সা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।