বাজাও প্রভু বাজাও ঘন বাজাও ভীম (bajao probhu bajao ghono bajao bhim)

বাজাও প্রভু বাজাও ঘন বাজাও ভীম বজ্র-বিষাণে দুর্জয় মহা-আহ্বান তব।
বাজাও! অগ্নি-তূর্য কাঁপাক সূর্য বাজুক রুদ্রতালে ভৈরব॥

দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! নট-মল্লার দীপক-রাগে
জ্বলুক তাড়িত-বহ্নি আগে
ভেরির রন্ধ্রে মেঘমন্দ্রে জাগাও বাণী জাগ্রত নব॥

দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! দাসত্বের এ ঘৃণ্য তৃপ্তি
ভিক্ষুকের এ লজ্জা-বৃত্তি,
বিনাশ জাতির দারুণ এ লাজ, দাও তেজ দাও মুক্তি-গরব॥

দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! খুন দাও নিশ্চল এ হস্তে
শক্তি-বজ্র দাও নিরস্ত্রে,
শীর্ষ তুলিয়া বিশ্বে মোদেরও দাঁড়াবার পুন দাও গৌরব॥

দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! ঘুচাতে ভীরুর নীচতা দৈন্য
প্রের হে তোমার ন্যায়ের সৈন্য,
শৃঙ্খলিতের টুটাতে বাঁধন আনো আঘাত প্রচণ্ড আহব॥

দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও! নির্বীর্য এ তেজঃ-সূর্য্যে
দীপ্ত করো হে বহ্নি-বীর্য্যে
শৌর্য ধৈর্য মহাপ্রাণ দাও, দাও স্বাধীনতা সত্য বিভব!
দুর্জয় মহা-আহ্বান তব, বাজাও!

  • ভাবার্থ: নজরুলের এই গানটি রচনা সময়, ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভারত জুড়ে তখন চলেছিল বাদ-প্রতিবাদ। এই প্রেক্ষিতে নজরুল এই গানটির মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শক্তি ও সাহস প্রার্থনা করেছেন। পরমস্রষ্টার কাছে প্রাথনা করেছেন স্বাধীনতার রণবাদ্যে, দুর্জয় আহ্বানে বেজে উঠুক ভীম বজ্র-বিষাণ। কবির প্রাথনা, সে রণবাদ্যের অগ্নিসম তূর্যে কম্পিত হোক সূর্য, আর রুদ্রতালের গুরুগম্ভীর ছন্দে নেচে উঠুক রুদ্র-ভৈরব। সে আহ্বান বেজে উঠুক নট-মল্লার, দীপক রাগের অগ্নিসম সুরবিন্যাসে, সে সুরের মেঘমন্দ্রিত ধ্বনিতে জেগে উঠুক বিজয়ের বাণী।

    কবির প্রার্থনা স্রষ্টার সমর-আহবানে দেশ যেন দাসত্বের ঘৃণ্য আত্নতৃপ্তি থেকে মুক্ত পায়। মুক্তি পায় যেন পরাধীনতার গ্লানি ও লজা'র দীনতা থেকে। প্রাথরণা করেন যেন সংগ্রামের হাত রঞ্জিত হয়ে ওঠে শত্রুর রক্তে। অস্ত্রহীন যেন পায় শক্তি-বজ্রবাণ। এ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, ভারতবর্ষ যেন তার স্বাধীনতার বিজয়ের গৌরবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

    স্রষ্টার আহ্বানে জেগে ওঠা স্বাধীনতাকামী মানুষ যেন ঘুচাতে পারে তার সকল ভীরুতা, নীচতা, দীনতা। কবি স্রষ্টার কাছে এমন যোদ্ধার কামনা করেন, যাঁরা প্রচণ্ড যুদ্ধে পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ছিন্ন করতে পারেন। তিনি প্রার্থনা করেন পরাধীনতার নিবীর্য সূর্যে সংগ্রামের তেজ সঞ্চালিত হোক। যেন ফিরে জেগে উঠন শৌর্য, বীর্ষ ও স্বাধীনতাকামী মহাপ্রাণ। স্রষ্টাত কাছে কবির শেষ প্রার্থনা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় শাশ্বত স্বাধীনতার বৈভব।

     
  •  রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 'সওগাত' পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষের বৈশাখ ১৩২৭ সংখ্যায়। এই গানের বিষয়ে সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, তাঁর 'সওগাত' ও নজরুল প্রবন্ধে লিখেছেন- "...'সওগাত ২য় বর্ষ, বৈশাখ, ১৩২৭-এ প্রকাশিত হয় নজরুলের 'উদ্বোধন' শীর্ষক একটি গান। গানটি 'বসন্ত সোহিনী-দাদরা' তালে রচিত। এটিই নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গান। গানটি এই: বাজাও প্রভু বাজাও ঘন বাজাও..."

সওগাত পত্রিকায় গানটি প্রকাশের সময় নজরুলের বয়স ছিল ২০ বৎসর ১১ মাস। এরপর ' বিষের বাঁশী প্রথম সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। আগষ্ট ১৯২৪) গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ' উদ্বোধন'  শিরোনামে।

  • পত্রিকা: সওগাতবৈশাখ ১৩২৭ (এপ্রিল-মে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যা। শিরোনাম: 'উদ্বোধন'। রাগ: বসন্ত সোহিনী। তাল দাদরা।
  • গ্রন্থ: বিষের বাঁশীপ্রথম সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। আগষ্ট ১৯২৪)। শিরোনাম: ' উদ্বোধন' ।
  • পর্‌যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ভক্তি (সাধারণ। প্রার্থনা। স্বদেশ)
    • সুরাঙ্গ: ধ্রুপদাঙ্গ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।