'কি দেখিতে এসে কি দেখিনু শেষে’ (ki dekhite eshe ki dekhinu sheshe)

 'সাইমন রিপোর্ট'
[প্রথম ভাগ : ভারতের যাহা দেখিলেন]

কোরাস্‌:
'কি দেখিতে এসে কি দেখিনু শেষে’, রিপোর্ট লেখেন সাইমন, -
হুটোপুটি ক’রে ছুটোছুটি করে বুড়োবুড়ি, কাছে নাই মন!
'ম্যাদা' দল আর 'উদো' দল পায়ে হস্ত বুলায় হর্দম,
পুঁচকে দলের ফচ্‌কে ছোঁড়ারা ছিটাইছে বটে কর্দম!
ত্যক্তের চেয়ে ভক্তই বেশি, আহাহা ভক্ত বেঁচে থাক্‌!
ছোলা ভাজা দেবো, কাঁচকলা দেবো নিশ্চয়ই মনে এঁচে রাখ॥
আসিয়া ভারতে সান্‌কি লইয়া আসিল ফকির ফোক্‌রা,
পিছন হইতে ঠোক্‌রায় টাকে ডেঁপো গোটা কয় ছোক্‌রা।
ছেলে যা দেখিনু, ছেলের চাইতে পিলে বড়, অধিকন্তু –
বৃহত্তম 'জু' দেখিনু জীবনে – প্রথম দু’পেয়ে জন্তু॥
মাথা নাই হেথা নাইক’ হৃদয়, শুধু পেট আর পিঠ সার,
এত 'পিঠে' খেয়ে কেমনে হজম করে, করে না কো চিৎকার!
ঠুঁটো হাত শুধু চিৎ ক’রে রাখে শূন্যের পানে তুলিয়া
বিপদে শ্রীপদ ভরসা, তাহাও শ্রীপদে গিয়াছে ফুলিয়া॥
মাড়োয়ারি আর 'মালোয়ারি' জ্বর এদের পরম মিত্র,
মরমরদেরে একেবারে মেরে রাখিছে দেশ পবিত্র!
ইহাদের হরি বন্ধু মোদেরি 'গুড্‌ ওলড্‌ জেন্টলম্যান্‌'
কুচুরি-পানায় ডোবা ও খানায় এঁর কৃপা করে 'ভ্যান্‌ ভ্যান্‌'॥
এ দেশের নারী বেজায় অনাড়ী, পুরুষের হাতে তবলা,
তবলাতে চাঁটি মারিলে সে কাঁদে, ইহারা কাঁদে না, অবলা!
জরীশাড়ি-মোড়া চকলেট ওরা বন্দী হেরেম-বাক্সে,
বাহির করিলে খেয়ে নেবে কেই কাজেই বাক্সে থাক্‌ সে॥
ইস্‌কুলে, প্রেমে, জ্বরে প'ড়ে প'ড়ে জীবন কাটায় ছেলেরা;
মাঝে মাঝে করে ভ্রান্ত মিষ্ট শান্তে লেনিন ভেলেরা॥
চোখের চাইতে চশমাই বেশি, ভাগ্যিস্‌ ওরা অন্ধ,
নৈলে কখন টানিয়া ধরিত আমাদের গলা-বন্ধ॥
আমাদের দেখাদেখি কেহ কেহ করিছে ক্লাবের মেম্‌-বার,
স্কার্ট পরে চাষারা, বাবুরা বিবি লয়ে যায় চেম্বার!
বিলিতি দাওয়াই ধরিতেছে ক্রমে, আর বাকি নাই বেশি দিন,
গুড্‌বয় হয়ে গিলিছে আফিম, হুইস্কি, ব্রাণ্ডি, কুইনন্‌॥
কাফ্রি চেহারা, ইংরিজি দাঁত, টাই বাঁধে পিছে কাছাতে;
ভীষণ বম্বু চাষ করে ওরা অস্ত্র-আইন বাঁচাতে!
চাচা-ভাইপোতে মিল নই সেথা আড়াআড়ি টিকি দাড়িতে,
যুদ্ধ বাধাই উহাদেরি দিয়ে, ধরিয়া আনাই ফাঁড়িতে॥
উহাদের মতো কেলে রং সব গাছপালা হল আকাশের,
উহাদের গাই মোদেরি গাই-এর মতো সাদা দুধ দেয় ফের।
কালো চামড়ায় ভিতরে ওদের আমাদেরি মত রক্ত,
এ যদি না হ'ত -শাশ্বত হ'ত ও-দেশে মোদের তক্ত!

  • রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত 'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • চন্দ্রবিন্দু
      • প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
      • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। চন্দ্রবিন্দু। কমিক গান। শিরোনাম: সাইমন-কমিশনের রিপোর্ট। প্রথম ভাগ। পৃষ্ঠা: ২১০-২১৩]

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।