বাজে মৃদঙ্গ বরষার ওই দিকে দিকে দিগন্তরে (baje mridongo boroshar oi)

বাজে মৃদঙ্গ বরষার ওই দিকে দিকে দিগন্তরে
নীরস ধরা সরস হলো কাহার যাদু-মন্তরে॥
বন-ময়ূর আনন্দে নাচে ধারা-প্রপাত ছন্দে
ঝরঝর গিরি-নির্ঝর স্রোতে অন্তর সুখে সন্তরে॥
শ্যামল প্রিয়-দরশা হলো ধূসর পথ-প্রান্তর
বন্ধু-মিলন-হরষা গাহে দাদুরি অবান্তর।
             শ্রাবণ-প্লাবণ-বন্যাতে
             আজি পুষ্পে পল্লবে বন মাতে
এলো শ্যাম শোভন সুন্দর প্রাণ-চঞ্চল ক'রে মন্থরে॥

  • ভাবার্থ: এটি প্রকৃতি পর্যায়ের এই গানে গ্রাম-বাংলার বর্ষার চিরন্তন রূপকে উপস্থাপিত করা হয়েছে। দিগদিগন্ত আবরিত মেঘ-মৃদঙ্গের গুরুগুরু ধ্বনিতে বর্ষা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। প্রবল বর্ষণের যাদুমন্ত্রে নীরস পৃথিবী হয়ে ওঠে সরসা। বর্ষার এই আনন্দোৎসবে বনময়ূরী নাচে বর্ষণের ছন্দে ছন্দে, পার্বত্য ঝারণার স্রোতধারায় সাঁতার কাটে পরমানন্দে। বর্ষার আগমনে ধূসর পথ-প্রান্তর শ্যামল বরণে প্রিয়দর্শিনী হয়ে ওঠে। মিলনানন্দের অবিরাম আনন্দ গীত গায় বর্ষার ব্যাঙ। ভরা শ্রাবণের বন্যায় প্লাবিত চরাচর, তার মাঝে পুষ্প-পল্লবের প্রাবল্যে বনভূমি হয়ে ওঠে মাতোয়ারা।

    এই চঞ্চল-মাতাল বর্ষার মাঝে কবি প্রকৃতিতে খুঁজে পান শ্যামল-শোভার সৌন্দর্য, প্রাণচাঞ্চল্যের মাঝে খুঁজে পান প্রশান্তি। কবি মনে করেন, বর্ষার প্রাণ-চঞ্চল রূপকে প্রশমিত করার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় বর্ষার সৌম্যরূপ।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৩) টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল  ৩৭ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড টুইন [সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৩)।  এফটি ৪৫২৮। শিল্পী: দেবেন বিশ্বাস।।
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড।  প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। ২০ সংখ্যক গান] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বর্ষা)
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।