বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে। (bidayer bela mor ghonaye ashe)

বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে।
দিনের চিতা জ্বলে অস্ত আকাশে॥
দিন শেষে শুভদিন এলো বুঝি মম
মরণের রূপে এলে মোর প্রিয়তম,
গোধূলির রঙে তাই দশ দিশি হাসে॥
দিন গুণে নিরাশার পথ-চাওয়া ফুরালো,
শ্রান্ত এ জীবনের জ্বালা আজ জুড়ালো।
ওপার হ'তে কে এলো তরী বাহি'
হেরিলাম সুন্দরে, আর ভয় নাহি,
আঁধারের 'পারে তার চাঁদ মুখ ভাসে॥

  •  পাণ্ডুলিপির নমুনা
  • ভাবসন্ধান: যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের পঞ্চম গানটিই ছিল 'বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে। এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় পূরবী রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।

'বিকালের মূলতানীর পর পিলু ভীমপলস্ত্রী প্রভৃতি রাগিণীতে আর কড়ি মা নেই। সান্ধ্য প্রহর যেই এল, অমনি কড়িমা আন্‌লেন 'পূরবী'কে ধ'রে। পূরবী এল কাঁদতে কাঁদতে। দুই মা'র গলা জড়িয়ে এর কান্না অতি সকরুণ।।

দিনাবসানের ঈঙ্গিত মৃত্যুর রূপকতায় উঠে এসেছে এই গানে। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কবি পূরবীকে জীবনের সুর ও ছন্দের অবসানের বেদনায় দেখেছেন। কবি সূর্যকে অস্তাকাশে জীবনাবসানের চিতার আগুনরূপে কল্পনা  করেছেন। আবার মৃত্যুর অন্ধকার জগতের ওপারে যে অপার শান্তির জগত, তার ছায়াও দেখেছেন পূরবী রাগে।  তাই কবি পূরবীকে বন্ধুর মতো স্বাগত জানিয়েছেন। কবি মনে করেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পার্থিব যন্ত্রণা অবসান ঘটে এবং পরপারের অপার শান্তির জগতের দ্বার খুলে যায়। যে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় তিনি এতদিন অতিবাহিত করেছেন, পূরবী তারই বার্তা এনে দেয় অগ্রদূত হয়ে। তাই তিনি জীবনযাত্রা শেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অপার শান্তি ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করার প্রেরণা পান পূরবীর সুরে। কবি উপলব্ধি করেছেন মৃত্যুর অন্ধকারময় সাগরে ওপারে রয়েছে অপার শান্তির পারাবার। মৃত্যুর অন্ধকার অবয়বের ভিতরে ফুটে উঠে সৌন্দর্যের চন্দ্রমুখ। তাই কবির কাছে পূরবী জীবনের শেষ বন্ধু।

  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৬.৫৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' নামক গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়। এই গীতি-আলেখ্যে গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৬১৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৮৩।
    • একশো গানের নজরুল স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, আশ্বিন ১৪০৮। সেপ্টেম্বর ২০০১) ৯৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৩৩-১৩৪। কাব্য গীতি। পূরবী। ত্রিতাল।
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড (আব্দুল আজীজ আল-আমান, সম্পাদিত)। (হরফ প্রকাশনী। জানুয়ারি ২০০৪)। কাব্যগীতি। গান: ৫৫১। পৃষ্ঠা: ১৪২।
    • বুলবুল - দ্বিতীয় খণ্ড (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ)। [নজরুল-রচনাবলী, ষষ্ঠ খণ্ড (বাংলা একাডেমী, ১২ ভাদ্র, ১৪১৪। ২৭ আগস্ট, ২০০৭)] -এর ২য় গান। পূরবী-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ২৫৩-২৫৪।
  • বেতার:
    • যাম যোজনায় কড়ি মধ্যম। গীতি-আলেখ্য। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২২শে জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সান্ধ্য অধিবেশন। ৬.৫৫-৭.৪৪। 
      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১২শ সংখ্যা। ১৬ জুন, ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ৬৫০-৬৫১
    • প্রহর পরিচারিকা। গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯

      • সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ১০৫৮

  • সুরকার : কাজী নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার: ননীগোপাল কর্মকার। [একশো গানের নজরুল স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, আশ্বিন ১৪০৮। সেপ্টেম্বর ২০০১)]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি ও সঙ্গীত [গীতি-আলেখ্য]
    • সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ
      • রাগ: পূরবী
      • তাল: ত্রিতাল
      • গ্রহস্বর: পহ্মা। [একশো গানের নজরুল স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, আশ্বিন ১৪০৮। সেপ্টেম্বর ২০০১)]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।