বৈকালি সুরে গাও চৈতালি গান, বসন্ত হয় অবসান (boikali sure gao choitali gaan)

বৈকালি সুরে গাও চৈতালি গান, বসন্ত হয় অবসান।
নহ্‌বতে বাজে সকরুণ মূলতান॥ 
নীরব আনমনা পিক চেয়ে আছে দূরে অনিমিখ
ধূলি-ধূসর হলো দিক আসে বৈশাখ অভিযান॥ 
চম্পা-মালা বিমলিন লুটায় ফুল-ঝরা বন-বীথিকায়,
ঢেলে দাও সঞ্চিত প্রাণের মধু-যৌবন দেবতার পায়।
অনন্ত বিরহ-ব্যথায় ক্ষণিকের মিলন হেথায়
ফিরে নাহি আসে যাহা যায়-নিমেষের মধুতর গান॥ 

  • ভাবার্থ: এই গানের প্রথমাংশে বসন্তের বিদায় বেলায় বর্ণাঢ্য প্রকৃতিতে আসন্ন রুক্ষ গ্রীষ্মে বর্ণহীনের আভাষ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কিন্তু গানের শেষাংশে এসে এই বিদায়কে সামগ্রিক জীবনের অন্তহীন বিরহ হিসেবে উপলদ্ধি করেছেন। তাই গানটি শেষ পর্যন্ত বসন্ত-বিদায়ের গান হয়ে ওঠে নি।

    এই গানের শুরুতে পাওয়া যায়- বসন্তের শেষ প্রহরের শেষ-চৈতলিতে বিদায়ীবসন্তের আভাষ। পড়ন্ত বসন্তের সকরুণ বিদায়ী অনুভব আর দিবা দ্বিতীয় প্রহরের শেষের রাগ মুলতানীর সুরের মেলবন্ধনে গাঁথা নহবতে তার ছোঁয়া লাগে।

    ধূলি-ধুসর গৈরিক বৈশাখের বর্ণহীন গ্রীষ্মে বসন্তের গান হারিয়ে, কোকিল দূর প্রান্তরে চেয়ে থেকে অনিমেষে। যেন সঞ্চিত প্রাণের মধু-যৌবনকে ঋতুরাজের পায়ে বিসর্জন দিয়ে, ফুল-ঝরা বন-বনান্তর লুটিয়ে পড়ে মলিন চম্পা-মালা।

    কবি মনে করেন প্রকৃতির মিলন-বিরহের মেলায় বরহ অন্তহীন, মিলনটাই ক্ষণিক। বসন্তের মিলন মেলা ফিরে আসে বটে, কিন্তু এক বসন্তের হারিয়ে যাওয়া আনন্দময় মধুরতর গান কখনই ফিরে আসে না। আবার ফিরে আসে নবতর গান নিয়ে নতুন বসন্ত, কিন্তু বিগত বসন্তের আনন্দ তার পরিপূরক হয়ে ওঠে না।
     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে  (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪২) এইচএমভি [রেকর্ড]  রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৩ মাস।
     
  • রেকর্ড:
    • এইচএমভি [সেপ্টেন্বর ১৯৩৫ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪২)। শিল্পী: সুরেন্দ্র চক্রবর্তী। রেকর্ডটি পরে আর প্রকাশিত হয়নি।
    • রেকর্ড: টুইন [ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ (মাঘ-ফাল্গুন ১৩৪৩)। এফটি ৪৮৩২। শিল্পী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। রাগ-পঞ্চম।] [শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:  আসাদুল হক। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৮৪-৮৭] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
     
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বসন্ত)
    • সুরাঙ্গ রাগাশ্রয়ী

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।