অকূল তুফানে নাইয়া কর পার [akul tufane naiya koro par]
অকূল তুফানে নাইয়া কর পার
পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কাণ্ডারি
নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার॥
থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল
পুণ্যহীন শূন্য মরু সম হৃদি-তল নাহি ফুল নাহি ফল
পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল
নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরি সম্বল।
সাহারায় নাহি জল
শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা
ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার॥
- ভাবসন্ধান: জগৎ-সংসার পাপরূপী সমুদ্র আজ ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। সেই অকূল তুফান-সাগর পার হওয়ার মতো কবির কাছে তরীরূপী কোনো অবলম্বন নেই, নেই পার হওয়ার মতো নেই পুণ্যের কড়ি। তাই কবি সেই অস্থির দুঃসহ এবং উপায়হীন দশায় একমাত্র পরম স্রষ্টার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কবির মন অতিবাহিত জীবনের পাপের পরিনামের ভয়ে সর্বদা অস্থির। তিনি ফেলে আসা জীবন-পথে দেখেন পুণ্যহীন মরুপ্রান্তর। সেখানে কোনো পুণ্য-ফুল ফোটে নি, কোনো কল্যাণের ফল ধরে নি। তাঁর চলার পথে তিনি সঙ্গহীন সঙ্গীহীন। তাই কবি স্রষ্টার করুণা পাওয়ার আশায় উদ্বেলিত হয়েছেন। কবির জীবনক্ষেত্র যেন জলহীন, রুক্ষ সাহারা মরুভূমি। কবি স্রষ্টার কাছে প্রারথনা করেন, যে সে জীবন-সাহারায় স্রষ্টার অপার করুণা শ্রাবণের জলধারায় সিক্ত হয়ে উঠুক।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির সুনির্দিষ্ট রচনাকাল পাওয়া যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪১) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি প্রথম এই গানটির রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ১ মাস।
ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা গ্রন্থে লিখেছেন-রেকর্ড বুলেটিনের মন্তব্য-গায়ক এই গান দুইখানির রচনা, সুর সংযোজনা এমনভাবে করিয়াছেন যাহাতে হিন্দু, মুসলমান সকলেরই আনন্দদায়ক হয়” গান দুইখানি অর্থে আলাচ্য গানটি ও রেকর্ডের অপর পিঠের গান - ‘এসেছি তব দ্বারে’।
- রেকর্ড সূত্র:
- এইচএমভি। জুন ১৯৩৪। এন ৭২৪৪। শিল্পী: গণি মিঞা (ধীরেন দাস)। সুরকার: ধীরেন দাস। উল্লেখ্য, গানটি শিল্পী গণি মিঞা ছদ্ম নামে রেকর্ড করেছিলেন।[শ্রবণ নমুনা]
- [শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড। ভাদ্র ১৪০৩। আগষ্ট ১৯৯৬। প্রথম গান। রেকর্ডে গণি মিঞা (ধীরেন দাস)-এর গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। [নমুনা]
- পর্যায়: