ভবনে আসিল অতিথি সুদূর। (bhobone ashilo otithi sudur)

রাগ: গৌড় সারং, তাল: ত্রিতাল
ভবনে আসিল অতিথি সুদূর।
সহসা উঠিল বাজি' রুমু রুমু ঝুম্
              নীরব অঙ্গনে চঞ্চল নূপুর॥
মুহু-মুহু বন-কুহু বোলে
দোয়েল তমাল-ডালে দোলে ;
মেঘের ধ্যান ভুলি' চমকি' আঁখি খোলে
              'কে-গো-কে' বলে বন-ময়ুর॥
দগ্ধ হিয়ার জ্বালা জুড়ায়ে
সজল মেঘের শীতল চন্দন কে দিল বুলায়ে ?
বকুল-কেয়া-বীথি হ'তে
ছুটে এলো সমীরণ চঞ্চল স্রোতে
চাঁদিনী নিশীথের আবেশ আনে
               মিলন তন্দ্রাতুর অলস-দুপুর॥

  • ভাবসন্ধান: ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সন্ধ্যা ৭.১৫টায় প্রচারিত হয়েছিল সারঙ্গ রঙ্গ গীতিআলেখ্য। এই গীতিআলেখ্যের অষ্টম গান হিসেবে এই গানটি উপস্থাপিত হয়েছিল সারং অঙ্গের রাগ হিসেবে। এরপর, ২২শে জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৬.৫৫টায় প্রচারিত হয় যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম গীতি আলেখ্য। এই গীতি-আলেখ্যের ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের তৃতীয় গান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল এই গানটি। যেহেতু নজরুল এই গানটি রচনা করেছিলেন 'গৌড় সারং' প্রকৃতি উপস্থাপনের জন্য, তাই যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যমের ব্যবহারটা মুখ্য হয়ে উঠেনি।

    যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম  গীতিআলেখ্যে গানের শুরুতে যাম যোজনায় 'গৌর সারং' রাগের ভূমিকা এবং কড়ি মধ্যমের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যটি নজরুল যুক্ত করেছিলেন এই গীতি আলেখ্যের আলোকে। নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এ প্রসঙ্গে যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা হলো-

'টোড়ির পর যে সব সারং গীত হয় তার মধ্যে শুদ্ধ সারং ও গৌড় সারং ছাড়া অন্য রাগে তীব্র মধ্যম নেই। গৌড় সারংকে দিনের বেহাগও বলা হয়। দুপুর বেলায় এই রাগ গাওয়া হয়। এরও দুই মা। এর দুই মা'র উপরে সমান টান। এর চলন অত্যন্ত বাঁকা। এর খেয়াল গান গাওয়া হচ্ছে শুন্‌লেই এর বাঁকা স্বভাবের পরিচয় পাবেন।

যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে গৌড়সারং রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। গৌর সারংকে দুপুরের বেহাগ বলা হয়। তাই গানে গৌড় সারংকে গ্রহণ করা হয়েছে অতিথির মতো। যার আগমনে প্রকৃতির শ্রাবণের স্নিগ্ধ রূপ ফুটে উঠে। নূপুরনিক্কনের সুমধুর ধ্বনি যেনো আকস্মিকভাবে মুখরিত করে তোলে। বন-কোকিলের মধুর ধ্বনির সাথে তমাল শাখায় যেন দোয়েল দোল খায়, বনময়ূর সচকিত হয়ে যেন ডাকে কে-গো-কে।

গৌর সারং-এর আবির্ভাবে উত্তপ্ত হৃদয়ে যেন সজল মেঘের স্পর্শসুখ আবেশিত করে। বকুল-কেয়া বন থেকে ছুটে আসে আনন্দ-চঞ্চল সমীরণ। অলস-দুপুরে যেন চন্দ্রালোকিত রাত্রি আবেশ ছড়িয়ে পড়ে।

  • রচনাকাল স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে (মঙ্গলবার ১৩ চৈত্র ১৩৪৬), সন্ধ্যা ৭.১৫টায়, কলকাতা বেতার থেকে প্রথম প্রচারিত হয় সারঙ্গ রঙ্গ সঙ্গীতালেখ্য। সঙ্গীতালেখ্যের তৃতীয় গান ছিল, এই গানটি। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ১০ মাস।
     
  • পাণ্ডুলিপি: [পাণ্ডুলিপির নমুনা]
  • গ্রন্থ: নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ১৫৯। পৃষ্ঠা ৫০]
  • বেতার:
    • সারঙ্গ রঙ্গ (গীতি আলেখ্য. সারঙ্গ অঙ্গের রাগভিত্তিক অনুষ্ঠান)                
      • প্রথম প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ৬ এপ্রিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৪ চৈত্র ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭.১৫-৭.৫০ মিনিট।
              [সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১১শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা অনুষ্ঠান সূচী। পৃষ্ঠা: ৩৪০, ৩৬৯]
      • দ্বিতীয় প্রচার: কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২৩ নভেম্বর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)। তৃতীয় অধিবেশন। ৮.০০-৮.৩৯।
              [সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ২২ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১২৮৬
      • তৃতীয় প্রচার: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ৩ ফাল্গুন ১৩৪৮)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-১। তৃতীয় অধিবেশন। ৭.৪৫-৮.২৯।
               [সূত্র:  The Indian listener. Vol VII. No 3, page 79]
    • যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম । ২২শে জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা ৬.৫৫। শিল্পী: ইলা ঘোষ। [পাণ্ডুলিপির নমুনা]
    • প্রহর পরিচারিকা
    • (গীতিচিত্র)। ১১ অক্টোবর ১৯৪১ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। প্রচার সময়: রাত ৭.৪৫-৮.১৯
  • রেকর্ড: মেগাফোন [সেপ্টেম্বর ১৯৪০ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৭)। জে.এন.জি. ৫৪৯৭। শিল্পী ভবানী দাস। সুর: নজরুল ইসলাম।] [শ্রবণ নমুনা]
  •  স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: আসাদুল হক। নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (চতুর্থ খণ্ড)। দ্বিতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। ১৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৮৮-৯০] [নমুনা]
     
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • পর্যায়:

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।