মঞ্জু মধু ছন্দা নিত্যা তব সঙ্গী। (monju modhu chhonda nitta tobo songi)

   তাল: মণিমালা (২০ মাত্রা)
মঞ্জু মধু ছন্দা নিত্যা তব সঙ্গী।
সিন্ধুর তরঙ্গ নৃত্যের কুরঙ্গী॥
গুঞ্জা বেলা পদ্ম পুঞ্জীভূত বক্ষে
অশ্রু-লাজ কুণ্ঠা শঙ্কা-ঘন চক্ষে,
অঙ্গে শ্যামাকান্তা! মন্দাকিনী-ভঙ্গী॥
অঙ্গুলিতে বন্দী অঙ্গুলির ছন্দ
কণ্ঠে সুর-লক্ষ্মী বৃন্দাবনানন্দ,
গঙ্গা এলে বক্ষে সন্ধ্যারাগে রঙ্গী॥

  • ভাবার্থ: সংস্কৃত কাব্যের ছন্দের মাত্রা বিন্যাসে যে ছন্দরূপ পাওয়া যায়, তারই অনুকরণে নজরুল বাংলাগানে তালের পদবিন্যাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এই সূত্রে তিনি কিছু নতুন তালের গানও রচনা করেছিলেন। আলোচ্য গানটি সেরূপ একটি পরীক্ষামূলক গান। গানটি তিনি রচনা করেছিলেন সংস্কৃত মণিমালা ছন্দের মাত্রাবিন্যাসের অনুকরণে। এই গানে কবি 'মণিমালা' ছন্দেরই গুণকীর্তন করেছেন নানা রূপকতায় নানা উপমায়।

    গানটির স্থায়ীতে তিনি 'মণিমালা'কে বলছেন- 'মনোহর মধুর ছন্দ তোমার সঙ্গী, সে ছন্দ সাগরের তরঙ্গে এবং নৃত্যরতা হরিণীর মতো।

    প্রথম অন্তরাতে কবি- এই ছন্দে গুঞ্জা, বেলা পদ্ম ফুলসমূহের সৌন্দর্য-সৌরভ অনুভব করেছেন। একই সাথে তাঁর কাছে মনে হয়েছে এই ছন্দে রয়েছে আনন্দ-বেদনাশ্রুর সলাজ কুণ্ঠা উদ্ভাসন। কবির কাছে এই ছন্দে অঙ্গরূপ শ্যামার মতো এবং চলনে স্বরগস্থ মন্দাকিনীর ধারার মতো। সব মিলিয়ে এই ছন্দে পাওয়া যায় একই সাথে আনন্দ-বেদনা ও উচ্ছলতা প্রকাশের মনোহর রূপ।

    দ্বিতীয় অন্তরাতে অঙ্গুলি শব্দটি কবি ব্যাবহার করেছেন- এ ছন্দের পর্বগুলোকে। সংস্কৃত 'মণিমালা' ছন্দের গণের বিচার পাওয়া যায়- ৪টি ভাগ। আর প্রতি ভাগে রয়েছে ৫টি করে মাত্রা। এই ছন্দের প্রতিটি অঙ্গুলি বা পর্বে রয়েছে পার্বিক ছন্দ। এই ছন্দে প্রকাশিত বাণীতে প্রতিষ্ঠা পায় সুর-লক্ষ্মী অর্থাৎ সরস্বতী, খুঁজে পাওয়া যায় বৃন্দাবনের আনন্দময়ী শ্রীরাধার লীলাময়ী ছন্দ। যেন সমুদ্রের সাথে গঙ্গার মিলনমোহনায় সন্ধার মিলন-বিরহে মাধুরী মেশানো রাগরঙ্গে পূর্ণতা পায় এই ছন্দ।
     
  • রচনাকাল ও স্থান:গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল(শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৩৪৮) কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে ছন্দিতা নামক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৭ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • শেষ সওগাত
      • প্রথম সংস্করণ [২৫শে বৈশাখ ১৩৬৫ (বৃহস্পতিবার, ৪ মে ১৯৫৮)। ছন্দিতা। ৯ মণিমালা]
      • নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। শেষ সওগাত। ছন্দিতা।  মণিমালা। পৃষ্ঠা ১২১]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১০৫৩। তাল: মণিমালা (২০ মাত্রা)। পৃষ্ঠা: ৫০০]
    • গ্রন্থ:
      • শেষ সওগাত
        • প্রথম সংস্করণ [২৫শে বৈশাখ ১৩৬৫ (বৃহস্পতিবার, ৪ মে ১৯৫৮)। ছন্দিতা। ৯ মণিমালা]
        • নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। শেষ সওগাত। ছন্দিতা।  মণিমালা। পৃষ্ঠা ১২১]
      • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১০৫৩। তাল: মণিমালা (২০ মাত্রা)। পৃষ্ঠা: ৫০০]
    • বেতার: ছন্দিতা। কলকাতা বেতার-কেন্দ্র। ২৬ জুলাই ১৯৪১ [শনিবার, ১০ শ্রাবণ ১৩৪৮] সময়: ৮-৮.৩৯।
    • পর্যায়:
      • বিষয়াঙ্গ: তালের ভাবগত লক্ষণগীত
      • সুরাঙ্গ: তালাশ্রয়ী (ছন্দপ্রধান)
      • তাল: মণিমালা তাল। সংস্কৃত 'মণিমালা' ছন্দের আদলে নজরুল ‌ইসলাম এই তালটি সৃষ্টি করেছিলেন।

সূত্র:

  • বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ, ১৪শ সংখ্যা। ১৬ জুলাই ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ৮৩৬
  • The Indian Listener পত্রিকার Vol VI, No. 14, 7 july 1941. page 71

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।