মা এসেছে, মা এসেছে, মা এসেছে রে (maa eshechhe, maa eshechhe, maa eshechhe re)

মা এসেছে, মা এসেছে, মা এসেছে রে
মা এসেছে, মা এসেছে উঠ্‌ল কলরোল।
(ওরে) দিকে দিকে বেজে ওঠে সানাই কাঁসর ঢোল॥
ভরা নদীর কূলে কূলে, শিউলি শালুক পদ্মফুলে।
মায়ের আসার আভাস দুলে আনন্দ-হিল্লোল,
সেই খুশিতে পড়ল নিটোল নীল আকাশে টোল্॥
বিনা কাজের মাতন রে আজ কাজে দে ভাই ক্ষমা,
বে-হিসাবী করব খরচ সাধ যা আছে জমা।
এক বছরের অতৃপ্তি ভাই, এই ক’দিনে কিসে মিটাই,
কে জানে ভাই ফিরব কিনা আবার মায়ের কোল্।
আনন্দে আজ আনন্দকে পাগল ক’রে তোল্॥

  • ভাবসন্ধান: দুর্গাপূজার মহালয়ার পরে, মহাপঞ্চমী তিথির সন্ধ্যায় দুর্গা দেবীর আগমনী মন্ত্র উচ্চারিত হয়। দেবীর মূর্তিতে চোখ আঁকা হয়। এই অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জনপদবাসী অনুভব করেন মাতৃরূপিণীর দুর্গার আগমন ঘটেছে। এরই উচ্ছ্বাস এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে- আনন্দ-কলরোলের মধ্য দিয়ে। তাদের এই উচ্ছ্বাসে সঙ্গ দিয়ে বেজে ওঠে সানাই-কাঁসর-ঢোল। তাঁর আগমনের আভাসে শরতের  ভরা নদীর কূলে কূলে আনন্দ-হিল্লোলে আন্দোলিত হয় শিউলি শালুক পদ্মফুল। খুশির ছায়া পড়ে নিটোল নীল আকাশের গায়ে।

    এমন আনন্দোৎসবে কর্মজীবী জনপদবাসীর মনে জাগে বিনা কাজের আনন্দ-উল্লাস। এরা তাদের দু'হাত খুলে জমানো সাথ মেটানোর জমানো অর্থ নির্বিচারে খরচ করতে দ্বিধা করে না। কারণ এই আনন্দোৎসবের জন্য তারা প্রতীক্ষা করেছে সারা বছর। তাই তারা ভেবে পায় না, দুর্গোৎসবের মাত্র কয়েকদিনে তারা কি করে সারা বছরের আনন্দকে উপভোগ করবে। তারা জানে নে, আবার এই ভাবে দুর্গা মায়ের স্নেহদর্শন লাভ করবে কি না। তাই আসন্ন দুর্গাপূজাকেই শেষ আনন্দোৎসবের উন্মত্ততায় নিজেকে উজার করে দিতে চায়।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪১) মাসে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৩ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • গানের মালা
      • প্রথম সংস্করণ [আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ৭০। বাউল-ভাটিয়ালি মিশ্র-দাদরা।
      • নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা। ৭০। বাউল-ভাটিয়ালি মিশ্র-দাদরা। পৃষ্ঠা ২৩৪]
  • রেকর্ড: এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪১)। এন. ৭২৭৩। শিল্পী: বাংলার ছেলেমেয়ে (কমল দাশগুপ্ত, সুবল দাশগুপ্ত, সুধীরা দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দাশগুপ্ত)। সুর: কমল দাশগুপ্ত। [শ্রবণ নমুনা]
     
  • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইন্সটিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১১। গান সংখ্যা ৩৮৩।
     
  • বেতার: আগমনী কলকাতা বেতারকেন্দ্র-ক। তৃতীয় অধিবেশন। [৬ অক্টোবর ১৯৪০ (রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৩৪৭)। সন্ধ্যা: ৭.২০-৮.১৯।
    • [সূত্র:
      • বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ১০৪৪
      • The Indian-listener. Vol.V. No. 19. p.1485]
         
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: ইদ্‌রিস আলী [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, চব্বিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] ১৬ সংখ্যক গান। [নমুনা]
     
  • সুরকার: কমল দাশগুপ্ত
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, শাক্ত। দুর্গা। আগমনী
    • সুরাঙ্গ: বাউলাঙ্গ
    • তাল: দাদরা
    • গ্রহস্বর: পা

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।