মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ। (mrittu nai,nai dukhho ,achhe shudhu pran)

রাগ: আশা-ভৈরবী (নজরুল-সৃষ্ট), তাল: ত্রিতাল
মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ।
অনন্ত আনন্দ হাসি অফুরান॥
        নিরাশার বিবর হ'তে
        আয় রে বাহির পথে,
দেখ্‌ নিত্য সেথায় 
— আলোকের অভিযান॥
ভিতর হ'তে দ্বার বন্ধ ক'রে,
জীবন থাকিতে কে আছিস্‌ ম'রে।
        ঘুমে যারা অচেতন
        দেখে রাতে কু-স্বপন,
প্রভাতে ভয়ের নিশি হয় অবসান॥

  • ভাবসন্ধান: হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে জগৎঘটক রচিত উদাসী ভৈরব নাটিকায় ব্যবহৃত নজরুলের রচিত সূচনা সঙ্গীত। এই কাহিনি মতে দক্ষ একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু জামাতা শিবের প্রতি বিদ্বেষবসত, শিব এবং কন্যা সতীকে এই যজ্ঞে আমন্ত্রণ করেন নি। সতী তা জানতে পেরে অযাচিতভাবে এই যজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি লাভের জন্য শিবের কাছে যান। এই সময় শিব ধ্যান মগ্ন ছিলেন। তাই তিনি শিবের ধ্যান ভাঙার জন্য যোগিনীদের সাথে নিয়ে ধ্যানমগ্ন শিবের সামনে উপস্থিত হন।

    ধ্যানভঙ্গের পর শিব দুর্গাকে অনাহূতভাবে দক্ষযজ্ঞে যেতে নিষেধ করেন। দুর্গা সে নিষেধ উপেক্ষা করে দক্ষযজ্ঞে যান। সতীর অবর্তমানে শিব আকুল হলে, আশা দেবী তাঁকে আশার বাণী শোনান। কবি উদাসী ভৈরব নাটিকায় আশাদেবী একটি পৌরাণিক দেবী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই দেবী সর্বদা আশার বাণী শোনান বলেই, তিনি আশা দেবী। নাটিকায় শিবের উক্তি থেকে এমন ধারণাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। শিব দেবীকে বলেন-

তুমি চির মধুরভাষিণী, আশা। নিরাশার অন্ধকারে যখন সবে হাবুডুবু খায়, অকুল পাথারে যখন কূল কিনারার ক্ষীণ আভাসটুকু পযন্ত দৃষ্টি পথে আসে না, জীব যখন একান্ত মনে মৃত্যুর হাতে আপনাকে সঁপে বাঁচতে চায়, তোমার হাসির ক্ষীণ রেখাই তাকে তখন ফিরিয়ে আনে জীবনের উপকূলে। তার আবার বাঁচতে সাধ যায়। তুমি আশা, এই নিরাশার অন্ধকারে, আনো— আনো— নতুন দিনের আলো। তপস্যাক্লিষ্টা নিশীথিনীর ললাটে পরাও নবারুণের চন্দন টিপ।

সতীর বিরহে আকুল শিবকে আশা দেবী সান্ত্বনা দেন এই গানে। তিনি শিবকে শোনান অনন্ত আনন্দের কথা, যেখানে মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ। আছে আনন্দময় জীবনের আস্বাদ। দেবী এই গানের মাধ্যমে নিরাশার অন্ধ-গহ্বর থেকে বাইরে এসে আনন্দময় আলোকিত জীবনের পথে চলার আহ্বান করছেন। নিজেকে অবরুদ্ধ করে থাকাটা যে বেঁচে মরে থাকার সামিল- সে কথায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই অবরুদ্ধ দশায় যারা অচেতন থাকে, তার দুঃস্বপন্ দেখে। এ অবরুদ্ধ জীবন কাল-রাত্রির মতো। সেখান থেকে বেরিয়ে এলে, সে কালরাত্রির অবসান হয়। শুরু হয় সুপ্রভাত। এ গানের মধ্য দিয়ে মূলত আশা দেবী সতীহীন শিবের মনে আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন

  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক রচিত উদাসী ভৈরব নামক নাটকের জন্য লিখেছিলেন। নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকালীন অধিবেশনে ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট পর্যন্ত, কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
     
  • গ্রন্থ:
    • উদাসী ভৈরব [পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি]। দ্বিতীয় দৃশ্য। আশা ভৈরবীর গান।
    • নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। পৃষ্ঠা: ৩১-৩২। [নমুনা]
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১৬৭৮।
       
  • পত্রিকা: বেতার জগৎ (পত্রিকা), ১০ম বর্ষ ২১শ সংখ্যা। উদাসী ভৈরব। ১ নভেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮১৫। [নমুনা]
     
  • বেতার: উদাসী ভৈরব। নাটিকা। দ্বিতীয় গান। কলকাতা বেতার কেন্দ্র [১২ নভেম্বর ১৯৩৯ (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬)] , প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠান। ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট। নাট্যকার জগৎ ঘটক। পরিকল্পনা, গীত রচনা ও সংগঠন- নজরুল ইসলাম। আশা ভৈরবীর গান। শিল্পী- গীতা মিত্র
     
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ। নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)]  [নমুনা]
  • পর্যায়:

'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।