অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে [ogni-rishi! ogni-bina tomay shudhu saje]

 

তাল: তিলক কামোদ, তাল: ঝাঁপতাল

অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে;

তাই ত তোমার বহ্নি-রাগেও বেদন-বেহাগ বাজে॥

            দহন-বনের গহন-চারী ─

            হায় ঋষি ─ কোন্‌ বংশীধারী দেশি

নিঙড়ে আগুন আনলে বারি, অগ্নি-মরুর মাঝে।

সর্বনাশা কোন্‌ বাঁশি সে বুঝতে পারি না যে॥

দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হানছিলে বৈশাখে,

হঠাৎ সে কার শুন্‌লে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।

            বজ্রে তোমার বাজ্‌ল বাঁশি,

            বহ্নি হল কান্না-হাসি,

সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী ─ মন সরে না কাজে।

তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্তশিখা রাজে॥

  • রচনাকাল: এই গানটি রচনার সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন-  ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী দলের অন্যতম সদস্য বারীন্দ্রকুমার ঘোষ। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল, রাত সাড়ে বারটায় বিহারের মুজাফ্ফরপুর ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী বোমা নিক্ষেপ করেন। এই বোমা হামলার পর পুলিশ অনুসন্ধানের সূত্রে ২রা মে,  ৩২ নম্বর মুরারিপুকুরের বাগান বাড়িতে বোমা তৈরির কারখানা আবিষ্কার করে এবং বোমা তৈরি মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ এই বোমা হামলার তদন্তের সূত্রে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মে একটি মামলা দায়ের করে। ঐতিহাসিকভাবে এই মামলা 'আলীপুর বোমা মামলা' নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই মামলার রায় প্রকাশিত হয় ৬ই মে। এই রায় অনুসারে বারীন ঘোষকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরে আপিলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড রহিত করা হয় এবং ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আন্দামানে পাঠানো হয়। প্রায় এক দশক পর ব্রিটিশ-ভারতীয় সরকার রাজনৈতিক বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে আশ্বিন (১৩২৭ বঙ্গাব্দ) দিকে বারীন ঘোষকে কলকাতায় এনে মুক্তি দেওয়া হয়।

    বারীন্দ্রকুমার ঘোষ কলকাতায় এসে সেকালের প্রখ্যাত মাসিক পত্রিকা  ' 'নারায়ণ' '-এ যোগদান করেন। উল্লেখ্য, এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২১ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে। সম্পাদক ছিলেন শ্রীচিত্তরঞ্জন দাশ। উল্লেখ্য, তাঁর কলকাতায় আসার আগে থেকেই থেকেই তাঁর রচিত 'দ্বীপান্তরের কথা' ধারাবাহিকভাবে ' নারায়ণ'-এ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ-কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। সেই সাথে তাঁর লেখা পাঠ করে, নজরুল তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন।

    মোসলেম ভারত পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩২৭' সংখ্যায় প্রকাশিত নজরুলের রচিত বাঁধন-হারা গল্পের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছিল। ' 'নারায়ণ'-এর 'অগ্রহায়ণ ১৩২৭' সংখ্যায়, এই গল্পের প্রশংসা করা হয়েছিল। এই সূত্রে  নজরুল বারীন্দ্রকুমারকে কবিতাকারে একটি চিঠি লেখেন এবং বন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে তা কবিতাটি পাঠিয়েছিলেন। এ কবিতাটির প্রথম দুটি চরণ ছিল-
        অগ্নি-ঋষি অগ্নিবীণা তোমায় সাজে;
        তাই তো তোমার বহ্নি-রাগে বেদন-বেহাগ বাজে।

    এই বিচারে গানটির সূচনা হয়েছিল নজরুলের ২১ বৎসর ৬ মাস বয়সে। এই কবিতাটিকে পরে নজরুল গানে পরিণত করেছিলেন এবং তা উপাসনা পত্রিকা পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। এর শিরোনাম ছিল 'অগ্নি-ঋষি'। শিরোনামের নিচে লেখা ছিল- 'তিলক-কামোদ-ঝাঁপতাল'। এই গানটি অগ্নি-বীণা প্রথম সংস্করণের [কার্তিক ১‌৩২৯ বঙ্গাব্দ। ২৫শে অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ] উৎসর্গ -পত্রে যুক্ত করেছিলেন।

     
  • গ্রন্থ: অগ্নি-বীণা  প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১‌৩২৯ বঙ্গাব্দ। ২৫শে অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ। উৎসর্গ]
  • পত্রিকা: উপাসনা [শ্রাবণ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২১)]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।