কেন প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া (keno pran othe kandiya)

   কেন   প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া
          কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া গো।
  আমি   যত ভুলি ভুলি করি, তত আঁকড়িয়া ধরি
          শ্যামের সে রূপ ভোলা কি যায়, নিখিল শ্যামল যার শোভায়
          আকাশে সাগরে বনে কান্তারে লতায় পাতায় সে রূপ ভায়।
আমার   বঁধুর রূপের ছায়া বুকে ধরি' আকাশ-আরশি নীল গো
  বহে    ভুবন প্লাবিয়া কালারে ভাবিয়া কালো সাগর-সলিল গো। সখি গো 

           যদি ফুল হয়ে ফুটি তরু-শাখে, সে যে পল্লব হয়ে ঘিরে থাকে। সখি গো 
  আমি   যেদিকে তাকাই হেরি ও-রূপ কেবল
 সে যে   আমারি মাঝারে রহে করি' নানা ছল
 সে যে   বেণী হয়ে দোলে পিঠে চপল চতুর।
 সে যে   আঁখির তারায় হাসে কপট নিঠুর।
           তারে কেমনে ভুলিব, সখি কেমনে ভুলিব।
  থাকে   কবরী-বন্ধে কালো ডোর হয়ে কাল্‌ফণী কালো কেশে গো
  থাকে   কপালের টিপে, চোখের কাজলে কপোলের তিলে মিশে' গো।
 আমার   এ-কূল ও-কূল দু'কূল গেল।
           কূলে সই পড়িল কালি সেও কালো রূপে এলো।
   রাখি   কি দিয়া মন বাঁধিয়া, বাঁধিয়া বাঁধিয়া বাঁধিয়া গো॥

  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ (ডিসেম্বর ১৯২৯) মাসে প্রকাশিত 'চোখের চাতক' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩০ বৎসর ৬ মাস।

    এই গানটির রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রতিভা বসু তাঁর 'জীবনের জলছবি' গ্রন্থে লিখেছেন-

'হঠাৎ নজরুল খুব কীর্তন লিখতে শুরু করলেন। অবশ্য সেই অনুপ্রেরণার একটি নির্দিষ্ট কারণ ছিল। আমাদের পরিচারিকা নজরুলকে দেখে বলেছিল. 'ওমা এ যে একেবারে কালো কৃষ্ণ গো।' সেটা শোনার পর থেকে পিসিমা সব সময়েই কালোকৃষ্ণ বলে ঠাট্টা করতেন। উনিও পিসিমাকে খাঁদানাক বলে খ্যাপাতেন। পিসিমা জবাবে বলতেন, 'তা যাই বলো বাপু, খাঁদাই হই আর যাই হই, রং খানাতো তোমার চেয়ে গোরা।' হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতেন, 'নাও, মেলাও, পরখ করে দ্যাখো একবার-'।
    একদিন নজরুল বললেন, নাহ কালোরূপের যে কতো গুণ সেটা আর না দেখালে নয়।' সেই রাত্রেই কীর্তনের সুরে এই গানটি লিখলেন তিনি,
            'কেন প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া..."

  • চোখের চাতক
    • প্রথম সংস্করণ [ [কার্তিক ১৩৩৬ (ডিসেম্বর ১৯২৯)। গান ২০। কীর্তন]
    • নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। চোখের চাতক। গান ২০। কীর্তন। পৃষ্ঠা: ২০৬-২০৮]
  • নজরুল-গীতিকা
    • প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। কীর্তন। পৃষ্ঠা ৯১-৯৫]
    • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] নজরুল গীতিকা। ৭৯। কীর্তন। পৃষ্ঠা: ২২৩-২২৫]
  • রেকর্ড:  এইচএমভি। অক্টোবর ১৯৩০ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৩৭)। রেকর্ড নম্বর এন ৩১৩৫। শিল্পী: আশ্চর্যময়ী দাসী। [শ্রবণ নমুনা]
     
  • সুরকার: নজরুল ইসলাম
     
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: আহসান মুর্শেদ [নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি, ত্রিশতম খণ্ড,  নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা।  আষাঢ়, ১৪১৩/জুলাই ২০০৬] আশ্চর্যময়ী দাসী-এর রেকর্ডে গাওয়া গান অবলম্বনে কৃত স্বরলিপি। দশম গান।  [নমুনা]

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।