ম্লান আলোকে ফুট্‌লি কেন গোলক-চাঁপার ফুল (mlan aloke futli keno)

ম্লান আলোকে ফুট্‌লি কেন গোলক-চাঁপার ফুল।
ভূষণহীনা বনদেবী কার হ’বি তুই দুল॥
        হার হ'বি কার কবরীতে
        সন্ধ্যারানী দূর নিভৃতে,
ব'সে আছে অভিমানে ছড়িয়ে এলোচুল॥
মাটির ধরার ফুলদানিতে তোর হবে কি ঠাঁই,
আদর কে আর করবে তোরে, বসন্ত যে নাই হায় বসন্ত নাই ।
      গোলক-চাঁপা খুঁজিস কারে ─
      কোন্‌ গোলকের দেবতারে?
সে দেবতা নাই রে হেথা শূন্য যে আজি গোকুল॥

  • ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতির জাগতিক পর্যয়ের গান। বিষয় গোলকচাঁপা (কাঠগোলাপ)নামক ফুলের বন্দনা।  গ্রীষ্ম ও শরতের পড়ন্ত বিকেলে এই ফুল ফোটে। সাদা ও হলদে আভাযুক্ত এই ফুল পূর্ণতা পায় রাতের আঁধারে এবং দিনের বেলায় এই  ফুল নিস্প্রভ দেখায়।  ম্লান আলোতে ফুটন্ত এই ফুলের সাদা ও হলুদে আভায় মেশা এই ফুলের ভিতরে পৃথক কোনো রঙের জৌলুস পান না। প্রকৃতির ম্লান আলোর মতই জৌলুসহীন ভূষণহীনা। কবি এই এই ফুলকে বনদেবীর সাথে তুলনা করেছেন।

    নারীর পুষ্পালঙ্কারের ভূষিতা হওয়ার জন্যই যেন এই ফুলের সৃষ্টি। নারীর কানের দুল বা এই ফুলে গাঁথা হার হওয়ার মধ্যেই যেন রয়েছে এই ফুলের সার্থকতা। দিনের আলোর শেষে সন্ধ্যার ম্লান আলো পেরিয়ে সন্ধ্যাদেবী নামেন প্রকৃতিতে। তার কালোকেশে গোলকচাঁপার রূপ ও সৌরভ আমোদিত করবে,কিন্তু সহসা সন্ধ্যাদেবীর তাকে পায় না। যেন না-পাওয়ার এই অভিমানে সে প্রতীক্ষা করে।

    যৌবনের প্রতীক বসন্ত। কবি মনে করেন গোলকচাঁপার যৌবন-বসন্তের আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেয় এমন কেউ নেই। কবি মনে করেন, গোলকচাঁপা যেন কারো সঙ্গলাভের আশায় কারো অন্বেষণকরে। যেমন করে গোলকধামে বিষ্ণুর জন্য লক্ষ্মীর মনে প্রত্যাশা জাগে, তেমনি অজ্ঞাত কোনো দেবতাকে  যেন সে তার প্রেমের গোলকধামে প্রত্যাশ্যা করে। কিন্তু প্রকৃতিতে তার প্রেমের গোকুলে কোনো দেবতা আসে না। রাই কবি তার সাথে সমব্যথী হয়ে বলেন- সে দেবতা নাই রে হেথা শূন্য যে আজি গোকুল '।

     
  • রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩) মাসে এইচএমভি  গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ১১ মাস। 
     
  • রেকর্ড: এইচএমভি [মে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩)। রেকর্ড নং এন ৯৭২৬। শিল্পী:  কে.মল্লিক ও মানিকমালা। সুর: নজরুল ইসলাম। শ্রেণি- অর্কেস্ট্রা সম্বলিত।  কাহারবা [শ্রবণ নমুনা]
     
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: সুধীন দাশ। [ নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] ২৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১১৩-১১৫ [নমুনা]
  • পর্যায়:
    • বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক. ফুল)
    • সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
    • তাল: কাহারবা
    • গ্রহস্বর: ণাঃ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।