রস-ঘনশ্যাম- কল্যাণ-সুন্দর।

          রস- ঘনশ্যাম- কল্যাণ- সুন্দর।
          প্রশান্ত সন্ধ্যার উদার শান্তি দাও

          শ্রান্ত মনের ভার হর, হে গিরিধর
          যে নিবিড় সমাধির গভীর আনন্দে
          হিমালয় লীলায়িত নীরব ছন্দে,
          সেই মহাযোগে কর মোরে মগ্ন

          যে মহাভাবে ভোর মৌন নিলাম্বর
          অপগত-দুখশোক নিশীথ সুষুপ্তির মাঝে,
          নিথর সিন্ধুর অতল তলে যে শান্ত বিরাজে।
          যে সুধা লভিয়া ঋষি মধুছন্দা
          আনিল বেদবাণী অলকানন্দা
          অন্তরে বাহিরে সেই অমৃত দাও

          কর পুরুষোত্তম অজর অমর

  • ভাবসন্ধান: প্রহরভিত্তিক রাগের স্বরূপ তুলে ধরার জন্য, নজরুল ইসলাম 'প্রহর পরিচায়িকা' নামে গীতি আলেখ্য তৈরি করেছিলেন কলকাতা বেতারে জন্য। এই গানটি শ্যামকল্যাণ রাগে নিবদ্ধ। এই গানে অপূর্ব কৌশলে শ্যাম-কল্যাণ নামটি ব্যবহার করেছেন কবি। স্থায়ীর  'রস-ঘনশ্যাম- কল্যাণ-সুন্দর'-অংশে দ্ব্যর্থ ভাব ফুটে উঠে। প্রথমে মনে হয় রস-ঘন 'শ্যাম-কল্যাণ' সুন্দর। কিন্তু গানের পরবর্তী অংশে এই অর্থ থেকে দূরে নিয়ে যায়। এই গানে ধ্বনিত হয় প্রার্থনার ভক্তিরসে পুরুষোত্তমের সাধনা।

    জগৎ জুড়ে যে অপার গভীর আনন্দ, ছন্দের প্রবহমান
     কবি তা চৈতন্যের ভিতর দিয়ে অনুভব করতে চান। নানা রূপে বিরাজিত সে আনন্দ গ্রহণ ও ধারণের জন্য তিনি গিরিধর (শ্রীকৃষ্ণ)-এর কাছে নিবেদন করেছেন এই গানে।

    গানের স্থায়ীতে কবি সরস শ্যামল স্নিগ্ধ-কল্যাণময় সুন্দর গিরিধরের (শ্রীকৃষ্ণ) কাছে এই প্রার্থনা করেন, যেন তিনি প্রশান্ত সন্ধ্যার অপার শান্তি বর্ষণ করে তাঁর শ্রান্ত মনের অবসাদভার দূর দেন। অন্তরাতে তিনি প্রার্থনা করছেন, অটল অচল হিমালয় যে গভীর লীলায়িত ধ্বনিহীন ছন্দ ধারণ করে আছে, যে মহাভাবে আচ্ছন্ন হয়ে মহাকাশ মৌন; সেই গভীর ধ্যানে কৃষ্ণ তাঁকে মগ্ন করুক।

    যেমন দুঃখশোক অপসৃত হয় গভীর ঘুমের অতলে, যেমন অশান্ত সাগরের অতলে বিরাজ করে শান্ত রূপ। তেমনি কবির চৈতন্যের গভীরেও নেমে আসুক প্রশান্তি। যে সুগভীর অমিয় সুধা ধারণ করে মধুচ্ছন্দা ঋষি (বিশ্বামিত্রের পুত্র) বেদমন্ত্র রচনা করেছিলেন, যে সুধাধারা ধারণ করে স্বর্গ গঙ্গা প্রবাহিতা হয়েছিল অলকানন্দা রূপে
     কবি কামনা করেন সেই অমৃতধারা তাঁর অন্তরকে প্লাবিত করুক। তাঁকে দান করুক পুরুষোত্তমের সম্মান।

  • রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।  ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর রাত ৭.৪৫ টায় কলকাতা বেতার থেকে প্রচারিত হয় 'প্রহর পরিচায়িকা' প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারিত হয়েছিল। গানটি প্রচারের সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪২ বৎসর।
     
  • গ্রন্থভুক্তি :
    • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি,২০১২) নামক গ্রন্থের ১৭২৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা:৫১৪।
    • বরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ২০ সংখ্যক গান। শ্যাম-কল্যাণ-ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৪৯-৫১।
    • নজরুল গীতি, অখণ্ড (আব্দুল আজীজ আল-আমান, সম্পাদিত)। [হরফ প্রকাশনী, মাঘ ১৪১০। জানুয়ারি ২০০৪]। রাগ-প্রধান। শ্যামকল্যাণ-ত্রিতাল। গান-৯৪০। পৃষ্ঠা: ২৩৪।
       
  • বেতার: প্রহর পরিচারিকা। গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯
        সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ১০৫৮ [
    অলকানন্দা সুবৃতা (শ্রবণ নমুনা)]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
  • স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
    • জগৎ ঘটক। নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০০৫) -এর ২০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৯-৫১ [নমুনা]
       
  • পর্যায়: ভক্তি ও সঙ্গীত
  • তাল : ত্রিতাল
  • গ্রহস্বর : মা।

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।