শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না (shaon asilo fire)

তাল: কাহার্‌বা
শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না
বরষা ফুরায়ে গেল আশা তবু গেল না॥
ধানি রঙ ঘাগরি, মেঘ-রঙ ওড়না
পরিতে আমারে মাগো, অনুরোধ ক'রো না
কাজরির কাজল মেঘ পথ পেল খুঁজিয়া
সে কি ফেরার পথ পেল না মা, পেল না॥
আমার বিদেশিরে খুঁজিতে অনুক্ষণ
বুনো হাঁসের পাখার মত উড়ু উড়ু করে মন।
অথৈ জলে মাগো, মাঠ-ঘাট থৈ থৈ
আমার হিয়ার আগুন নিভিল কই?
কদম-কেশর বলে, 'কোথা তোর কিশোর',
চম্পা ডালে দোলে শূন্য দোলনা॥

 

  • ভাবসন্ধান: হয়তো বর্ষায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রিয়জন দূরপ্রবাসে চলে গেছে। বিরহিণী তারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে। আষাঢ় শেষ, শ্রাবণ মাসও যাওয়ার পথে। তবুও দয়িত ফিরে আসে নি, তাই বিরহিণীর এই সকরুণ আক্ষেপ। হয়তো তার দয়িত পছন্দ করতো ধান-সবুজ রঙের শাড়ি কিম্বা বর্ষার মেঘবর্ণের ওড়না। স্নেহময়ী মা, তাঁর কন্যাকে ওই সাজে শ্রীময়ীরূপে দেখতে চান। কিন্তু বিরহিণী সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। প্রিয়জন ছাড়া ওই সাজ নিরর্থক বলেই তার এই প্রত্যাখ্যান। অভিমান ভরে সে বলে বৎসরান্তে কাজরির (বর্ষার লোকজ উৎসব) কাজল বর্ণের মেঘ বর্ষায় ফিরে আসার পথ পায়, তার প্রিয়জন কি ফিরে আসার উপায় খুঁজে পায় না।

    বিরহিণী ঘরে বন্দিনী। যেমন ওড়বার নেশায় বুনো হাঁসের পাখা উন্মুখ, চঞ্চল- তেমনি তার মনও প্রিয়জনের সাথে মিলনের আকাঙক্ষায় উদ্বেলিত। বিরহিণী প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখে, শ্রাবণের প্রবল বন্যায় শুষ্ক প্রকৃতির তৃষ্ণার আগুন নিভে গেছে, পরক্ষণে ভাবে তার মনের বিরহী-আগুন তেমন করে নেভে নি। বর্ষার প্রস্ফুটিত কদম তাকে যেন ব্যঙ্গ করে বলে, কোথায় তোর কিশোর শ্যামরূপী দয়িত। চম্পা ডালে বাতাসের আন্দোলনে আজ কাজরির শূন্য দোলনা দোলে। বিরহিণী কৃষ্ণবিহীন রাধার মতো শুধুই মিলনের দোলনায় শূন্যতা অনুভব করে। তবু আশায় আশায় তার প্রতীক্ষার ক্ষণ অতিবাহিত হয়।

     
  • রচনাকাল ও স্থান:   গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় নি। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৫০), এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪৪ বৎসর ১ মাস।
  •  গ্রন্থ:
    • নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্‌ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। ২৮৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৮৮]
    • মেগাফোন রেকর্ড। জুন ১৯৪১ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৮)। কথা ও সুর: নজরুল ইসলাম। জেএনজি ৫৫৬০। শিল্পী: অনিতা রায়। পৃষ্ঠা: ৫।
  • রেকর্ড:
    • মেগাফোন। [জুন ১৯৪১ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৮)। জেএনজি ৫৫৬০। শিল্পী: কুমারী অনিতা রায়। কথা ও সুর। কাজী নজরুল ইসলাম। কাজরী।
    • এইচএমভি [জুন ১৯৪৩ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৫০)। এন ২৭৩৭৮। শিল্পী: ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র (ফেলু বাবু)][শ্রবণ নমুনা]
  • স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, সপ্তম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৫শে মে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ। ২৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১১১-১১৫] [নমুনা]
  • সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
     
  • পর্যায়

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।